X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁটা ও সাঁতার কাটা নিয়ন্ত্রণ করবে গেঁটে বাত

তাসকিনা ইয়াসমিন
১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৯আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৫৩

গেঁটে বাত ব্যায়ামের মাধ্যমে গেঁটে বাত রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে হাঁটা ও সাঁতার কাটা উত্তম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মশিউর রহমান খসরু এসব তথ্য জানান। তিনি বিএসএমএমইউ’র ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের রিউমাটোলজি রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকেরও সমন্বয়ক।
ডা. মশিউর রহমান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গেঁটে বাতের সব রোগীর জন্য চিকিৎসা একরকম নয়। কোনও নারী মা হতে চাইলে তাকে ছয় মাস আগে থেকেই গেঁটে বাত রোগের নির্ধারিত ওষুধ সেবন বন্ধ রাখতে হবে। এই রোগের সর্বোত্তম ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা এবং সাঁতার কাটা। আমরা ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেই এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আলাদা ওষুধ দেই। কার শরীরে কোনও ওষুধ দরকার, সেটা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেন। এ ব্যাপারে অবশ্যই রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। কোনও ওষুধ বিক্রেতার কথায় তা বদলানো বা বাদ দেওয়া যাবে না।’
২০ বছর ধরে গেঁটে বাতে আক্রান্ত রিনা খাতুন (৩৭)। তার শরীরের বিভিন্ন জোড়া বেঁকে যেত। ১৬ বছর ধরে তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারতেন না। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিতে আসেন। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রিনা খাতুন জানান, চিকিৎসকরা তার পরীক্ষা করে গেঁটে বাত রোগ হয়েছে বলে নিশ্চিত হন। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি হাঁটার সক্ষমতা অর্জন করেন।

শুধু রিনা নয়, সারাদেশে গেঁটে বাতে আক্রান্ত হওয়ার এই সংখ্যা দশমিক সাত ভাগ। বাংলাদেশি চিকিৎসকদের হিসেবে সারাদেশে ১৫ লাখ গেঁটে বাতের রোগী রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড মাস্কুলোস্কেলেটাল অ্যান্ড স্কিন ডিজিজেস’র তথ্যমতে, গড়ে এক শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় দশমিক চার ভাগ, ভারতের দশমিক সাত-পাঁচ ভাগ মানুষ এই রোগে ভুগছে। এইরোগ প্রতি তিন জন নারীর হলে একজন পুরুষের হয়। চিকিৎসাহীন থাকলে গড়ে ৪০ ভাগ রোগী তিন বছরের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে। ৮০ ভাগ রোগীর কোনও না কোনও অংশ বেঁকে যেতে পারে। 

গেঁটে বাতের যেসব রোগী বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ তারা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার।

বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন চাঁদপুরের মতলবের বাসিন্দা মো. রহিম। তিনি বলেন, ‘আমি ওষুধ খাবার পর মাথা ঘোরে। প্রায় দুই ঘণ্টা শুয়ে থাকার পর কাজ করতে পারি।’ একই  অভিযোগ করেন চাঁদপুরের আরেক বাসিন্দা মো. মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার গেঁটে বাতের ওষুধ খাওয়ার পর থেকে ব্যথা কম, কিন্তু মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে।’

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে চিকিৎসা করছি। আমার হাতের ফোলা কমেছে, কিন্তু সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হাতের গিটে ব্যাথা হয়।’

অধ্যাপক ডা. মশিউর রহমান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে রিউমাটোলজি ক্লিনিকে প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সেবা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে চালু হওয়া এই ক্লিনিকে ২৫৫ জন রোগী নিবন্ধিত হয়ে নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে গেঁটে বাত রোগীর সংখ্যা ৯৫ জন। এই রোগের সবচেয়ে সচেতনতার বিষয় হচ্ছে জোড়াগুলি যেন সক্ষমতা না হারায়। তাই এই রোগের নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়। রোগটি নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা জানার জন্য নিয়মিত কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। রোগীকে নিয়মিত ওষুধ সেবন, ব্যায়াম করতে হবে। প্রথম অবস্থায় আমরা রোগীদের এক সপ্তাহ পর পর ফলোআপে আসতে বলি। এরপর এক মাস পরপর এবং এরপর থেকে তিন মাস পরপর রোগীকে আসতে বলি।’

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শামসুন নাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আমরা বাইরে কম যাই। আমাদের শরীর যেসব কাজ করার উপযুক্ত না সেই কাজগুলোও করি। নারীদের মধ্যে রিস্ক ফ্যাক্টর বেশি কাজ করে। এ কারণে গেঁটেবাতসহ অন্য বাত রোগগুলোতে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হন।’

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তসলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন রোগী যদি নিজের কাজগুলো নিজে করতে পারেন। নিজের কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন। তার যৌন জীবন উপভোগ করতে পারেন। তাহলে তার রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে আমরা মনে করি। গেঁটেবাত নিরাময় করা সম্ভব নয়, তবে, নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ঠিকমত ওষুধ সেবন ও নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা