X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট করিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেলো!

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৩০আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৩১





মাওলানা নুরুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দুটি টেস্ট করাতে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন মাওলানা নুরুল হক। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত এই মাদ্রাসা শিক্ষক বিএসএমএমইউয়ের ল্যাবে ঘোরাঘুরি করেও টেস্টটি করাতে ব্যর্থ  হন। অবশেষে গতকাল রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) তিনি মারা যান।

মাওলানা নুরুল হকের ভাগ্নে শফিকুল ইসলাম সবুজ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার খালু সারাজীবন ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন, ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেলো। কিন্তু তার জীবনে ঘটলো আরও মর্মান্তিক ঘটনা— টেস্ট করিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেলো!’
মাওলানা নুরুল হকের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের সোলাগাড়ি গ্রামে। সেখানে স্ত্রী, তিন ছেলে ও তিন মেয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
শফিকুল ইসলাম সবুজ জানান, গত ১২ ডিসেম্বর রংপুরের চিকিৎসকের কথামতো বোনম্যারো ইভ্যালুয়েশন উইথ ট্রেফাইন বায়োপসি এবং ইমিউনো ফেনোটাইপিং ফর অ্যাকিউট লিউকেমিয়া প্যানেল— টেস্ট দুটো করাতে এসেছিলেন মাওলানা নুরুল হক। চেয়েছিলেন বিএসএমএমইউতে ভর্তি হতে।
সবুজ জানান, ১২ ডিসেম্বর সকালে বিএসএমএমইউতে প্রথমে টিকেট কেটে দেখানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক কামরুল ইসলাম বলেন, রোগীকে দ্রুত ভর্তি করা প্রয়োজন। কিন্তু বেড না পাওয়ায় ডা. কামরুলের কথামতো আউটডোর থেকে ডি ব্লকের ১৫ তলায় যান তারা। তখন বোনম্যারো টেস্ট করানোর জন্য তিনটি রক্ত পরীক্ষা দেওয়া হয়। যদিও এসব টেস্ট আগেই করা ছিল। সেগুলোর রিপোর্ট দেয় দুপুর দেড়টায়। রিপোর্ট নিয়ে নির্দিষ্ট রুমে গেলে চিকিৎসক বলেন, ‘এখন টেস্ট করলে আমরা বাসায় যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমার কি ফ্যামিলি নাই, বলেন? কাল সকালে ৯টায় আসেন তাহলে সিরিয়াল পাবেন।’
সবুজ বলেন, ‘পরদিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে যাই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সিদ্দিককে খুশি করে প্রথম সিরিয়াল নিই। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনও চিকিৎসক আসেননি। পরে বেলা ১টায় আমাদের জানানো হয়, আজ শুধু একটা টেস্ট হবে, অন্যটা হবে না। কারণ চিকিৎসক নেই।’
সবুজ জানান, তার খালু এর আগে বোনম্যারো টেস্ট করিয়েছিলেন। তাই সেটার কষ্ট সম্পর্কে তারা সবাই জানেন। তাই পরের দিন একসঙ্গে করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ। শনিবার সকালে চতুর্থ শ্রেণির সেই কর্মচারী সিদ্দিক সকালে ফোন জানান, আজ টেস্ট হবে না। মেশিন নষ্ট। এরপর ইঞ্জিনিয়ার এসে সেটি ঠিক করার পর সকাল ১০টার দিকে তারা টেস্ট করানোর জন্য যান।
টেস্ট করিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেলো! সবুজ বলেন, ‘প্রায় একঘণ্টা বসে থাকার পর একজন চিকিৎসক (নারী) বলেন, আজকেও টেস্ট হবে না। মেশিন আবার নষ্ট হয়েছে। কাল ১৬ ডিসেম্বর হাসপাতাল বন্ধ। আপনাদের ১৭ ডিসেম্বর আসতে হবে।’
মাওলানা নুরুল হকের ভাগ্নে বলেন, ‘আমি তাদের অনেক অনুরোধ করি, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এসময় হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকেও পাইনি। আমরা ১৭ তারিখ টেস্ট করানোর কথা ভেবে বাসায় আসি। এদিকে, আমরা বেড পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সকাল ৯টার দিকে খালু মুগদার বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।’
সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিএসএমএমইউয়ের হেমাটোলজি বিভাগে এই প্রতিবেদক গেলে কর্তব্যরত রিসেপশনিস্ট মো. সোহেল বলেন, ‘এই টেস্টটি করাতে চাইলে কাল সকাল ৮টার আগেই রোগীকে নিয়ে আসতে হবে। এই টেস্ট সকাল ১০-১২টা পর্যন্ত হয়। এটি করাতে খরচ ১৩ হাজার টাকা। আর এখানে না করাতে পারলে ইন্ডিয়া যেতে হবে।’
বিএসএমএমইউয়ের অাটতলায় নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে মায়ের বিএমডি টেস্ট করাতে আসা এক নারী তখন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই টেস্ট ঢাকা মেডিক্যালেও হয়। এখানে করাতে এসেছি মেশিনটা ভালো বলে। কিন্তু মেশিন নষ্ট বলে দুই দিন ঘুরিয়ে দিলো। এভাবে করলে মানুষ কতবার একটা টেস্টের জন্য আসবে?’
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের যেকোনও টেস্টের সময়সূচি বাড়ানো দরকার। আমি বিষয়টি নিয়ে হেমাটোলজির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো। বিএমডি টেস্টটি নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে হয়। এই বিভাগটি অ্যাটোমিক এনার্জির নিয়ন্ত্রণে। এরপরও আমি বিষয়টি দেখবো কেন এই মেশিনটি নষ্ট বলছে।’
মাওলানা নুরুল হকের ভাগ্নে শফিকুল ইসলাম সবুজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার খালু প্রথমে রংপুরে প্রাইম মেডিক্যালে এবং পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তার দুই বার বোনম্যারে টেস্ট করা হয়। তারপরও সেখানকার চিকিৎসক ডা. এ কে এম কামরুজ্জামান নিশ্চিত হতে পারছিলেন না তার সমস্যা কী? এজন্য তিনি  ঢাকায় দুটি টেস্ট করানোর জন্য পাঠান। এর মধ্যে একটি টেস্ট বিএসএমএমইউ ছাড়া অন্য কোথাও হয় না। চিকিৎসক বলেছিলেন, ঢাকায় টেস্ট দুটো করাতে পারলে রংপুর থেকেই রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব। আমার খালুর ধারণা ছিল ঢাকাতেই ভালো চিকিৎসা হয়। আমি তাকে পাসপোর্ট-ভিসা করে ইন্ডিয়া যেতে বলেছিলাম। তিনি রাজি হননি। তার বিশ্বাস ছিল দেশেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে।’

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা