X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘১০ থেকে উনিশে আমরা তোমার পাশে’

তাসকিনা ইয়াসমিন
০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৩৭আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৮

 কিশোরী: ছোটদের দলে নয়, আবার সে ঠিক বড়ও নয় (ছবি- প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল)

১০ থেকে উনিশ এই বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা ছোটদের দলে নয়, আবার তারা ঠিক বড়ও নয়। এই অবস্থায় তাদের শরীর ও মনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটে। ‘১০ থেকে উনিশে আমরা তোমার পাশে’—এই স্লোগান নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর।

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা তাবাসসুম মুস্তাফা অথৈ (১৯) নিজের সম্পর্কে বলেন, আমার যখন ১০ থেকে ১২ বছর বয়স, তখন  আমি খালা-মামাদের সঙ্গে মিলেমিশে বড় হয়েছি। তাই আমার তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে, আমার মধ্যে নিজেকে বড় ভাবার একটা তীব্র প্রবণতা ছিল। নিজেকে খুব বড় মনে করতাম। তখন যেকোনও ধরনের অসুবিধা-সুবিধার কথা আমি মা-বাবাকে বলে দিতাম। তারা আমার খুব ভালো বন্ধু। তাই আমার জীবনটা অন্য মেয়েদের চেয়ে একটু আলাদা।’

অথৈ বলেন, ‘আমি ওই বয়সে মেয়েদের যে পরিবর্তনগুলো হয়, সেগুলো সম্পর্কে মায়ের কাছ থেকেই জেনেছি। মা আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলতেন।’

২০০৭ সালে অ্যাডোলেসেন্ট রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে  প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এ জন্য পাঁচটি প্রজেক্ট রয়েছে তাদের। এই প্রজেক্টগুলোর ঢাকায় ৬০টি স্কুল, জেনারেশন ব্রেক থ্রো-এর আওতায় সারাদেশে ২৫০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় এই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। জেন্ডারবেইজড ভায়োলেন্স দূর করতেও কাজ করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মাসিকের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বপ্নবাস (স্বপ্নদোষ) এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

প্ল্যান বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে অথৈ’র মতো ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা এখন এক কোটি ৯ লাখ। যদি বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর ধরা হয়, তাহলে সেই সংখ্যা দাঁড়াবে চার কোটি ৬০ লাখ।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ পর্যায়ে বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু আছে। দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীরা ০৯১২৬০০৬০০ নম্বরে ফোন করে কাউন্সেলিং সার্ভিস নিতে পারবে।

প্ল্যান বাংলাদেশ-এর স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ইখতিয়ার উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকারের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের সহযোগিতা করার দরকার আছে। বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে এই সুযোগ নেই। আমাদের যে সিস্টেম আছে সেখানে যথেষ্ট নয়। কিছু কিছু সিস্টেম আমাদের কারিকুলামে আছে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিকভাবে স্বীকৃত না হওয়ায় ওরা সে সুবিধাও পাচ্ছে না। এই সময়ে তাদের সঠিক তথ্য দিতে হবে। তাদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো জায়গা আছে। তাদের যে সাপোর্টটা লাগবে সেটা পিতা-মাতাও বুঝতে পারে না। স্কুলের শিক্ষকরাও এ বিষয়ে প্রস্তুত না। ফলে কিশোর-কিশোরীদের জন্য সঠিক তথ্য পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ।

এই বয়সীদের মধ্যে বাল্যবিয়ে এবং গর্ভধারণের হার খুব বেশি উল্লেখ করে ইখতিয়ার উদ্দিন  বলেন, ‘অজ্ঞতার কারণে এই বয়সে অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণটা বেশি হয়। এই বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা একটি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি—অ্যাডোলেসেন্টদের সঠিক তথ্যটা দিতে হবে। বিষয়গুলো যথারীতি তাদের শিক্ষা কার্যক্রমেও আছে। এক্ষেত্রে স্কুলশিক্ষকরা সহযোগিতা করতে পারেন। যে কনটেন্টগুলো  স্কুলে আছে, সেগুলো তাদের দেওয়ার ক্ষেত্রে স্কুলে স্কুলে আমরা কাজ করি, যাতে করে স্কুল থেকেই তারা এই মেসেজটা পেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো মুখে বললে তারা নিতে চায় না, তাই বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে তাদের এটা শেখানো হয়, যেমন—লুডুতে তাদের এই বিষয়গুলো লেখা থাকে। তারা খেলতে খেলতে এই বিষয়গুলো পাচ্ছে। মাসিক কেন হয়? মাসিক হলে কীভাবে এটা কার সঙ্গে শেয়ার করবে। কে তাকে হেল্প করতে পারবে। কী ধরনের ব্যবস্থা তারা নিতে পারবে। ওদের জন্য স্কুল পর্যায়ে একটা কর্নার আছে। ওরা নিজেরা সেখানে বসে এই ধরনের ম্যাটেরিয়ালগুলো ব্যবহার করে এবং খেলে।’

তিনি জানান, শারীরিক পরিবর্তন আসার সময় কিশোরীদের বিবিধ সমস্যা হয়ে থাকে। মাসিকের সময় ব্যথা হওয়া বা বেশি পরিমাণে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি। এগুলো হলে কার কাছ থেকে তারা সেবা নেবে? এজন্য সরকারের সার্ভিস সেন্টারগুলোতে তারা যেন যেতে পারে এবং সেখানে যায়, সেজন্য আমরা ওদের সঙ্গে অনেক কাজ করি।’

এছাড়া, কিশোর-কিশোরীরা সহযোগিতা পেতে যেন সঠিক যায়গায় যেতে পারে এবং যেখানে যাবে সেখানে যেন অ্যাডোলেসেন্টদের ফ্রেন্ডলি ওয়েতে অ্যাটেন্ড করে, কাউন্সেলিং দেয়, বিশেষ করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তারা কীভাবে সার্ভিস দেবে, এজন্য আমরা তাদের ট্রেনিং দিয়ে থাকি। অ্যাডোলেসেন্টদের একটা গোপনীয়তার বিষয় আছে। এটি মেনে চললে তারা ওইসব জায়গায় যেতে পারে এবং সাপোর্ট নিতে পারে।

এরপরও কিশোর-কিশোরীদের জন্য পর্যাপ্ত কাজ হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শহরে খুব বেশি এলাকায় পৌঁছাতে পারিনি। যেমন, বস্তি এলাকায় আমরা যেতে পারিনি। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে মডেল কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের তৈরি হয়েছে এবং আমরা কিছু বেনিফিট দেখতে পাচ্ছি। তবে এই কার্যক্রম আরও বৃহৎ পরিসরে করা দরকার। যেন দেশের সব কিশোর-কিশোরী এর আওতায় আসতে পারে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
তাইওয়ানে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের
তাইওয়ানে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের
নারীবান্ধব টয়লেট সুবিধা পান না ৯৩ শতাংশ নারী
জরিপের তথ্যনারীবান্ধব টয়লেট সুবিধা পান না ৯৩ শতাংশ নারী
সিলেট নগরীতে অপরাধী শনাক্তে ১১০ সিসি ক্যামেরা
সিলেট নগরীতে অপরাধী শনাক্তে ১১০ সিসি ক্যামেরা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা