পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী আফরোজাকে হত্যার পর লাশ ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে শাজাহান। এরপর লাশ গুম করতে বন্ধু খোকন ও মুকুলকে বাসায় ডেকে আনে সে। তিনজন মিলে আফরোজার লাশ রাতের অন্ধকারে বাড়ির পাশে থাকা সেপটি ট্যাংকে ফেলে দেয়।
আফরোজার লাশ গুম করার পর শাজাহানের কাছ থেকে খোকন চার হাজার এবং মুকুল ২৫০০ টাকা নেয়। এরপরও ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে পরদিন স্থানীয় কাউন্সিলরকে আফরোজা হত্যার ঘটনা জানিয়ে দেয় খোকন ও মুকুল।
শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানান র্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।
গত ৩ জানুয়ারি গাজীপুরের ভাওরাইদ এলাকার নিজ বাসায় স্ত্রী আফরোজা বেগমকে (২৬) শ্বাসরোধে হত্যা করে শাজাহান মিয়া। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরদিন ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আফরোজার লাশ উদ্ধার করে। এরপর এই হত্যা ঘটনার ছায়া তদন্তে নামে র্যাব ১-এর একটি টিম। বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) রাতে ডেমরা এলাকা থেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত আফরোজার স্বামী শাজাহান মিয়া (২৮) এবং লাশ গুমে সহায়তাকারী তার দুই বন্ধু খোকন মিয়া (২২) ও মুকুল মিয়াকে (২৫) আটক করে র্যাব-১।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আট বছর আগে গাজীপুরের একটি সুতার মিলে কাজ করার সময় শাজাহান ও আফরোজার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। সংসারে একটি কন্যা সন্তানও ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করতে থাকে শাজাহান। এ কারণে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, ২০১৬ সালে আফরোজা কাজের উদ্দেশে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর স্ত্রীর কাছে বিদেশে অর্জিত টাকার হিসাব চাইতে থাকে শাজাহান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ বেড়ে যায়।’
র্যাবের তদন্তে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর আফরোজা ভোট দিয়ে বাসায় ফেরার পর তাকে বেধড়ক মারধর করে শাজাহান। এরপর ৩ জানুয়ারি সকালে দুজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী আফরোজাকে গলা টিপে হত্যা করে শাজাহান। এরপর খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রাখে সে।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যার পর স্ত্রীর লাশ গুম করতে শাজাহান তার বন্ধু খোকন ও মুকুলকে বাসায় ডাকেন আনে। তিনজনে মিলে ওইদিন রাতে বাসার পাশে সেপটিক ট্যাংকে আফরোজার লাশ ফেলে দেয়। গুমের পর শাজাহানের কাছ থেকে খোকন ৪ হাজার এবং মুকুল ২৫০০ টাকা নেয়। টাকা নিলেও খোকন ও মুকুল ঘটনা জানাজানির ভয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে বিষয়টি বলে দেয়। তারা কাউন্সিলরকে জানায়, রাতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তারা দেখতে পেয়েছে শাজাহান তার স্ত্রীর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি শাহাজানকে গ্রেফতারের পর তার অভিযোগের ভিত্তিতে খোকন ও মুকুলকেও আটক করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।