X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুবর্ণচরের ধর্ষণ ‘পূর্ব শত্রুতার জেরে’, তবে সেটা কী জানে না কমিশন!

উদিসা ইসলাম
১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪২আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৯

মানবাধিকার কমিশন

সুবর্ণচরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারীকে গুরুতর আঘাত এবং ধর্ষণ করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেও নির্বাচনের সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক খুঁজে পায়নি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল। বরং ওই নারীর স্বামীর দায়ের করা এজাহারের ভাষ্যমতে, ‘পূর্ব শত্রুতার জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে’ এই বাক্যটি প্রতিবেদনের মতামত অংশে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী সেই পূর্ব শত্রুতা তা স্পষ্ট নয় কমিশনের কাছে। কমিশন চেয়ারম্যান বলেছেন, এজাহারে বা সাক্ষ্যতে কেউ নির্বাচনের বিষয়টি বলেনি। তারা (ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামী) যে কথা বলেছে, সেই কথার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত প্রতিবেদনটা দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মামলার এজাহারে ওই নারী ধানের শীষের নেতা-কর্মী-সমর্থক হওয়া, তার ধানের শীষে ভোট দেওয়া, আসামিরা নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পোলিং এজেন্ট হওয়া, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনি বিরোধের জের ধরে মারধর বা ধর্ষণের শিকার হওয়া, তা উল্লেখ নেই। বরং এজাহারে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আসামিরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মারধর ও ধর্ষণ করে। এছাড়া, ওই নারী তদন্ত কমিটির সামনে দেওয়া জবানবন্দির কোথাও বলেননি যে, তিনি ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। তার স্বামীও এসব কথা বলেননি।’ স্বামী-স্ত্রীর জবানবন্দি থেকেই প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেওয়া বা ভোট দেওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বা আসামিরা আওয়ামী লীগের কর্মী হওয়া বা আওয়ামী লীগের কোনও কর্মীর মাধ্যমে ওই নারীকে মারপিট ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না।’

গত ৮ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে কমিশন। সেখানে লেখা আছে—জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন বলছে, সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার নারীকে গুরুতর আঘাত করা এবং তাকে ধর্ষণ করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা তদন্তকালে তদন্ত কমিটি খুঁজে পায়নি। বরং ওই নারীর স্বামীর দায়ের করা এজাহারের ভাষ্যমতে, পূর্ব শত্রুতার জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।

পূর্ব শত্রুতা বলতে কী বুঝাতে চেয়েছেন প্রশ্ন করা হলে তথ্যনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জের বিষয়ে প্রতিবেশীর কথা এসেছে, প্রপার্টি নিয়ে হতে পারে, কথাকাটাকাটি নিয়ে হতে পারে।’ এ বিষয়ে কমিটি জানতে চেষ্টা করেছিল কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওটা এজাহারের মধ্যে এজাহারকারী নিজেই বলেছে।’ আপনারা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে চেষ্টা করেছিলেন কিনা, জানতে চাইলে মাহমুদ ফায়জুল কবীর আরও বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু শুনেছি, রিপোর্টে কিছু কিছু বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যানকেও বলেছি। আপনারা তার কাছ থেকে শুনুন।’


জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশ

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কমিটি দেখিয়েছে যে, ওদের ভেতরে পারিবারিক শত্রুতা ছিল আরকি। ডিটেইল রিপোর্ট এটাচড আছে। আমাকে আমাদের তদন্ত কমিটি যেটা বলেছে, ডিটেইল রিপোর্টের মধ্যে কোথাও তারা বলেনি এটা নির্বাচন সংক্রান্ত। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কেন আসেনি। তারা আমাকে বললো, তারা (ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামী) তো এটা কোথাও বলেনি। তারা এজাহারে বলেনি, তারা আমাদের কাছে যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সেখানেও বলেনি। সেই কারণে তারা যে কথা বলেছে, সেই কথার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত প্রতিবেদনটা দিয়েছে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ধর্ষণের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই’, এ ধরনের প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা একমত হতে পারছি না। স্বাধীন মতামত কীভাবে প্রকাশ করা যাচ্ছে, তা আমরা দেখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা এবং এর পরিপ্রেক্ষিত ভিকটিম নিজেই বলেছেন। তারপর এ ধরনের প্রতিবেদন দুঃখের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের কপি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত, জেলা ও দায়রা জজ)-এর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। এই দলটি পরের দিনই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারী, নারীর স্বামী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ঘটনার পর ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেছিলেন, ভোটের দিন রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) পাংখারবাজার ১৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে তার স্ত্রীকে  হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। ওই দিন রাত ১২টায় কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। পরে ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী ওই নারী ও তার স্বামীকে গালাগালি করে। এরপর অস্ত্র দেখিয়ে নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। তারা ওই নারীকে গলাকেটে হত্যারও চেষ্টা করে। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে পরের দিন সকালে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন ধর্ষণের শিকার ওই নারীর স্বামী।

/জেইউ/ইউআই/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল