X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘হেলমেট যতক্ষণ আমার মাথায় ছিল, মনে হয়েছে বাইকটি আমার কাছে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:০১আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:০২

পুলিশের সহযোগিতায় ছিনতাই হওয়া স্কুটি ফেরত পেলেন শাহনাজ আক্তার পুতুল

‘হেলমেট যতক্ষণ আমার মাথায় ছিল, মনে হয়েছে বাইকটি (স্কুটি) আমার কাছে আছে। হেলমেটকেই আমার বাইক মনে হয়েছে। তাই হেলমেট মাথা থেকে খুলিনি। এখন আমি আমার রিজিক ফেরত পেয়েছি।’

স্কুটি ফেরত পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে শাহনাজ আক্তার পুতুল এসব কথা বলেন।

বুধবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তার কার্যালয়ে  স্কুটিটি শাহনাজের হাতে হস্তান্তর করেন। স্কুটি পেয়ে সেটি ওড়না দিয়ে মুছতে শুরু করেন বাইকটি। বাইকটি উদ্ধার করে দেওয়ায় তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

শাহনাজ বলেন, ‘আমার ভাবনার বাইরে ছিল বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে এতকিছু করতে পারে। একটা অসম্ভবকে তারা সম্ভব করেছে। আমি প্রতিদিন রাতে ইন্ডিয়ান চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রোল দেখি। সেখানে এরকম দেখানো হয়।’

তিনি বলেন. ‘বাইকটি চুরি হওয়ার পর আমার মাও আমাকে বকা দিয়েছে। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন, কেন আমি চাবি দিলাম তাকে? আমাকে সবাই অন্য কোনও পেশা খুঁজতেও বলছিল। কিন্তু আমি এটা করতেই পছন্দ করি। কারণ, আমার দুই সন্তানকে বাসায় দেখার কেউ নেই। সন্তানদের বাবাও আমি মাও আমি। আমি সন্তানদের কষ্ট দিতে চাই না। এই বাইক চালিয়ে আমি আমার সন্তানদের  রিজিকের ব্যবস্থা করি। আমি থানায় গিয়ে পুলিশকে বলেছি, এই গাড়িটাই আমার রিজিক, আমার গাড়ি আমাকে এনে দিন।’

শাহনাজ এই বাইক চালানো সংশ্লিষ্ট একটি চাকরি চেয়ে বলেন, ‘আমি এই কাজটি করতেই পছন্দ করি। আমাকে কেউ এরকম একটি চাকরি দিলে ভালো হয়। আমি হাত পেতে টাকা নিতে পছন্দ করি না। এটা আমার নীতিতে নেই।’

গত দুইদিন ধরে রাইড শেয়ার করতে পারেননি শাহনাজ। বিষয়টি পুলিশের বিবেচনায় ছিল। তাই ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পক্ষ থেকে শাহনাজের দুই সন্তানের জন্য ১০ হাজার টাকা দেন ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার।

তিনি বলেন, ‘আমরা আসামি জুবায়দুল ইসলাম জনিকে আদালতে পাঠিয়েছি। তার রিমান্ড চাইবো। রিমান্ড পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

তেজগাঁও পুলিশের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার শাহনাজকে তার হারানো স্কুটিটি উদ্ধার করে এর চাবি তার হাতে তুলে দেন

প্রেস ব্রিফিং শেষ হওয়ার পর শাহনাজ আবেগ আপ্লুত হয়ে ডিসি বিপ্লব কুমারকে সালাম করেন। এরপর তাকে স্কুটিটি বুঝিয়ে দেওয়া হলে সেটি নিজের ওড়না দিয়ে মোছেন। এরপর শাহনাজ তার স্কুটির পেছনে শেরেবাংলা নগর থানার এক নারী পুলিশ সদস্যকে বসিয়ে চালিয়ে ডিসি’র অফিস থেকে বের হয়ে যান।

গত মঙ্গলবার বিকালে চালানোর বাহানায় শাহানাজের স্কুটিটি ছিনতাই করে জুবায়দুল ইসলাম জনি নামের এক দুর্বৃত্ত। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন মানিক মিয়া এভিনিউতে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এদিন রাতেই শাহানাজ বাদী হয়ে স্কুটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জনিকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।

 

স্কুটি ছিনতাইকারী জনি

মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, ১০ জানুয়ারি মিরপুরের শ্যামলী এলাকায় জনির সঙ্গে শাহনাজের পরিচয় হয়। এ সময়  জনি নিজেকে পাঠাও চালক বলে পরিচয় দেয়। সে শাহনাজকে একটি স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে জানায়। তার কথায় আশ্বস্ত হলে সে ১৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টার সময় শাহনাজকে খামারবাড়ি এলাকায় আসতে বলেন। তার কথামতো স্কুটি নিয়ে যথাসময়ে সেখানে এলে হঠাৎ সে শাহনাজের স্কুটিতে উঠে বসে। এরপর তার অনুরোধে বিমানবন্দর এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে ফের মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আসে তারা। এরপর একটি টং দোকানে জনির সঙ্গে চা খান শাহনাজ। এ সময়  জনি স্কুটি চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলে শাহনাজ তাকে অনুমতি দেন। এরপর চালানোর নামে কৌশলে জনি স্কুটিটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

যেভাবে উদ্ধার হলো শাহনাজের স্কুটি

হঠাৎ পরিচয় এবং নির্দিষ্ট যাত্রী পাওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় জনিকে বিশ্বাস করেন শাহনাজ। এ কারণে ১৫ জানুয়ারি দুপুরে জনির কথা মতো খামার বাড়ি এলাকায় যান তিনি। ঘটনার দিন শাহনাজের সঙ্গে ফোনে কয়েকবার কথা হয়েছে জনির।  শাহনাজের ভাবনা ছিল, নির্দিষ্ট যাত্রীকে বাসায় আনা নেওয়া করতে পারলে তার সময়ও বাঁচবে, আয়ও বেশি হবে। সন্তানদের সময় দিতে পারবেন। এই আশায় জনির সঙ্গে দেখা করেন বলে জানিয়েছেন। এই দেখা করতে গিয়েই তার একমাত্র উৎস স্কুটিটি কৌশলে ছিনতাই করে পালিয়ে যায় জনি। এরপর মাহনাজ মামলা করলে তাকে সহায়তার জন্য শুরু হয় পুলিশি অভিযান।

ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘স্কুটি নিয়ে জনি নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। শাহনাজ তাকে কয়েকবার ফোন দেন। কখনও ফোন ব্যস্ত পান, কখনও বন্ধ পান। একাধিকবার ফোন রিসিভ করে জনি তাকে রঙ নম্বর ও বকাঝকা করে লাইন কেটে দেয়। পুলিশ জনির ফোন নম্বরটি ট্র্যাকিং করে অবস্থান নিশ্চিত হয়। তার ছবি সংগ্রহ করা হয়। এরপর পুলিশ অভিযান শুরু করে। জনির এক বোনকে প্রথমে চিহ্নিত করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রঘুনাথপুর এলাকা থেকে জনিকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকেই স্কুটিটি উদ্ধার করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে  জনি জানিয়েছে, বর্তমানে রঘুনাথপুরেই  পরিবারের সঙ্গে থাকে সে। তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন হাওলাদার। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়।

/এআরআর/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ