X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ

দীপু সারোয়ার
১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৬আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৪৯

শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

গত বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় দেশের প্রথম এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনও। ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নামে এই ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন হয় গত বছরের ২৪ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এর উদ্বোধন করেন। 

বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার জন্য বিদ্যুতের লাইন টানার ক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতাকেই দায়ী করছে ইনস্টিটিউট ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবো’। 

‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’র বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কাঁটাবন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে মাটির নিচ দিয়ে শাহবাগ, টিএসসি হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পর্যন্ত সোর্স লাইন যুক্ত করতে হবে। এজন্য দুই দশমিক ১৬ কিলোমিটার রাস্তা কাটা ও মেরামতের প্রয়োজন হবে। এই রাস্তা কাটা ও মেরামত ব্যয়ের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে ডিপিডিসি ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে মতবিরোধ চলছে।

গত মেয়াদের শেষ সময়ে গত ২৪ অক্টোবর ‘শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ডিপিডিসি বলছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আট গুণ বেশি মূল্য এবং কয়েকগুণ বেশি জামানত নির্ধারণ করে ডিমান্ড নোট দিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-যা গ্রহণযোগ্য নয়। 

ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘কাঁটাবন থেকে চানখাঁরপুল বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পর্যন্ত সোর্স লাইন যুক্ত করতে রাস্তা কাটার অনুমতি চেয়েছি ২০১৭ সালে। সম্প্রতি অনুমতি মিললেও রাস্তা কাটা ও মেরামতের খরচ বেশি চাওয়া হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’ 

ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘উদ্বোধন করলেই তো সব কাজ হয়ে যায় না। এরপরও অনেকগুলো কাজ বাকি থাকে। অবকাঠামোর মধ্যে  ভবনটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দু’বছর ধরে তৈরি হয়েছে। আবার ইনস্টিটিউটের অনেক যন্ত্রপাতি বিশ্বমানের হবে। এসব যন্ত্রপাতি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো দেশ থেকে আনা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কিন্তু এখন আমাদের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। অনেক আবেদন-নিবেদন করেও যা এখনও আমরা পাইনি। বিদ্যুতের সংযোগ যদি না হয় তাহলে কোনও যন্ত্রপাতি বসানো যাবে না। লিফট, এক্সেলেটর কিছুই চালু হবে না।’

ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে ডিপিডিসি ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে একটা সমঝোতা জরুরি। এটা হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ মিলবে।’ 

২০১৫ সালের নভেম্বরে একনেক সভায় ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই গত মেয়াদের শেষ সময়ে গত ২৪ অক্টোবর ইনস্টিটিউটটি উদ্বোধনও করেন তিনি। তবে অবকাঠামো তৈরি হলেও অানুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও জনবল নিয়োগের পর এটি চালু হতে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে বলে উদ্বোধনের সময় জানিয়েছিলেন ইনস্টিটিউটটির সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন। বিদ্যুৎ সুবিধা না পাওয়ায় এটি এই সময়েও চালু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা। 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই একর জমিতে ১২ তলাবিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নির্মাণ করা হয়েছে। বার্ন ইউনিট, প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ও একাডেমিক উইংসহ তিনটি ব্লক আছে এই ইনস্টিটিউটে। রোগীর চিকিৎসার জন্য আছে ৫০০ শয্যা। গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসার জন্য ইনসেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ২২টি শয্যা রয়েছে। ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও একটি অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড আছে ইনস্টিটিউটে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগী নিয়ে আসার জন্য ইনস্টিটিউট ভবনের ছাদে আছে হেলিপ্যাড সুবিধা। হাসপাতালের পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থাও আছে।  

ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ২০০ জনবল নিয়োগেরও অনুমোদন হয়ে আছে। 

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে। দেশব্যাপী শুরু হয় পেট্রোল বোমা হামলা। শত শত মানুষ সেসময় শুধু পুড়েই মরেনি, চিরতরে পঙ্গুত্বও মেনে নিতে হয়েছে অনেককে। ওই সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আগুনে পোড়া মানুষদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। 

/ডিএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উন্নয়ন পক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
‘উন্নয়ন পক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
২৬ বছরের বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ করলেন মামুনুল
২৬ বছরের বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ করলেন মামুনুল
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা