X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ: উসকানিদাতাদের শনাক্ত করার দাবি পুলিশের

নুরুজ্জামান লাবু
১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২২আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০২:০২

রাস্তায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা (ছবি- প্রতিনিধি)

নতুন সরকার ও নতুন বছরের শুরুতেই মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি কাঠামোর অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে ঢাকা শহরসহ সাভার ও আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকরা যে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন, তার মদদদাতাদের শনাক্ত করার দাবি করেছে পুলিশ। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়েছে পুলিশের একাধিক ইউনিট। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার পর তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

তবে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, মজুরি কাঠামোর অসঙ্গতি দূর করার যৌক্তিক দাবিতেই আন্দোলন করা হয়েছে। এখানে কেউ উসকানি বা মদদ দেয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে আন্দোলনের নেপথ্যে উসকানি বা ষড়যন্ত্র খোঁজাটা অন্যায় বলেও দাবি করেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে কয়েকটি সংগঠনসহ যারা উসকানি দিয়েছিল, তারা সবাই রাজনৈতিকভাবে বিরোধী মতাদর্শের। তাদের পরিকল্পনা ছিল শ্রমিক বিক্ষোভের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ শিল্প এলাকাগুলোতে অচলাবস্থা তৈরি করা। একইসঙ্গে বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থেকে বিক্ষোভে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তারা। যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-১-এর পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে যারা ইন্ধন দিয়েছে, আমরা তাদের কিছু নাম পেয়েছি; আন্দোলনে তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছে। আমরা তাদের আইডেন্টিফাই করে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায় রিপোর্টও পাঠিয়েছি। কিন্তু যেহেতু এটি চলমান প্রক্রিয়া, সেহেতু নামগুলো প্রকাশ করছি না।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনের নেপথ্যে পলিটিক্যাল ইন্ধন তো ছিলই; এ ছাড়া, সহজ-সরল গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের ভুল তথ্য দিয়ে তাদের মাঠে নামানো হয়েছিল। আমরা বিষয়গুলো আরও যাচাই-বাছাই করছি। যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি।’

সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৬ জানুয়ারি থেকে মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি কাঠামোতে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনে নামে পোশাক শ্রমিকরা। রাজধানী ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, আজমপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় শ্রমিক-মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে। এর পরও আন্দোলন থেকে সরে না আসায় আন্দোলনের ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে।

বিক্ষোভে শ্রমিকরা (ছবি- প্রতিনিধি)

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে যারা আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে।

শিল্প পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকা, সাভার ও আশুলিয়ার শতাধিক কারখানা থেকে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক নেতার নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে; যারা কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেন। এর বাইরে কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শ্রমিক নেতাদের ইন্ধন এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারেন তারা। এ ছাড়া, আন্দোলনের সময় ঘটনাস্থল থেকে যাদের গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ইন্ধনদাতাদের নামের তালিকা করা হয়। পরবর্তীতে তাদের ‘শর্ট লিস্ট’ করে নজরদারির মধ্যে আনেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

ওই কর্মকর্তা জানান, শ্রমিক আন্দোলনের সময় ঢাকা, সাভার ও আশুলিয়াতে যেসব মামলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে তাদের এসব মামলায় গ্রেফতার করা হবে।

শ্রমিক বিক্ষোভ (ছবি- প্রতিনিধি)

পুলিশের একটি সূত্রমতে, রাজধানী ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের শতাধিক কারখানাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিক নেতারাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে তালিকা করলেও গণহারে সাধারণ শ্রমিকদের হেনস্তা করা হবে না। যেসব শ্রমিকদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করা হবে।

সূত্রের দাবি, গত এক দশকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার নামে শতাধিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় ডজন রয়েছে ফেডারেশন। বেশির ভাগ সংগঠনের নিবন্ধনও নেই। এসব সংগঠনের নেতাদের বেশির ভাগই গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তও নন। এসব ব্যক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের হয়ে কাজ করে থাকেন। তারাই মূলত শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে নিজেরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের চিহ্নিত নেতারাই পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস সেক্টরে নৈরাজ্য করার পাঁয়তারা করছেন। এসব নেতার কেউ কেউ বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন বলেও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ ছিল, গার্মেন্টস শ্রমিকদের কারখানায় ফেরত পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। এখন পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আমরা এখন আন্দোলনের মদদাদাতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে যেসব নাম পাওয়া গেছে, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ের তথ্য-উপাত্ত আরও বেশি সুনির্দিষ্ট করা হবে।’

তবে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘আমাদের ভাষ্য হচ্ছে প্রথম যে গেজেটটা প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা গেছে সেখানে শ্রমিকদের চারটি গ্রেডে আলাদা করা হয়েছে। গ্রেডগুলোতে সমন্বয় নেই। গ্রেড অনুযায়ী কোনও কোনও শ্রমিকের বেতন আরও কমেছে। তো বিষয়টি স্পষ্ট করে সমন্বয় করার দাবিতেই যৌক্তিক আন্দোলন করছিল। এখানে কেউ উসকানি বা মদদ দেয়নি। এই সিচুয়েশন বিবেচনা না করে আন্দোলনের নেপথ্যে উসকানি বা ষড়যন্ত্র খোঁজাটা অন্যায়। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিকে অস্বীকার করা হচ্ছে।’

জলি তালুকদার বলেন, ‘যৌক্তিক আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করেন। তারা নেতিবাচক নন, সব সময়ই এই শিল্পের কীভাবে উন্নতি হবে তা চিন্তা করেন।’ তিনি বলেন, ‘যদি এটি যৌক্তিক আন্দোলন না হতো তাহলে একটা গ্রেডে বেতন বাড়াতো না।’

/এমএ/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান