X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যেভাবে ২৫ তরুণের স্বপ্ন ভঙ্গ

আমানুর রহমান রনি ও সাদ্দিফ অভি
২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:০১আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৩

প্রতারণা (ছবি-প্রতীকী) মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ২৫ তরুণের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রাজধানী ঢাকার একটি প্রতারক চক্র। টাকা নিয়ে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় জাল ভিসা ও বিমান টিকেট। ঘটনার প্রতিবাদ করায় চক্রের সদস্যদের হাতে মগবাজার এলাকার সেঞ্চুরি আর্কেড মার্কেটে মারধরের শিকার হন ভুক্তভোগীদের কয়েকজন। তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-৩৪)। মামলার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে চক্রের চার সদ্যকে। বাকিদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- শফিকুল ইসলাম (৫৬), মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে সোহেল (৪৬), আরমান হোসেন ওরফে প্রিন্স (২৫) ও শফিক মো. শফিউল্লাহ (৫৬)।

মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আলী আজগর এজাহারে উল্লেখ করেন, মো. হাফিজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলম, মেহেদী হাসান- এই তিন ব্যক্তি মগবাজারের সেঞ্চুরি মার্কেটের ৩ তলায় গত ৮ মাস আগে তাকে সহ মোট ২৫ জনকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে টাকা গ্রহণ করে। কাজটি করার স্বার্থে তারা বিভিন্ন সময় ৬০ লাখ টাকা গ্রহণ করে। টাকা নিলেও তারা মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। এর প্রতিবাদ করলে গত ১৯ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইটে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে বলে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে ওই চক্র তাদের জাল ভিসা ও টিকেট ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পরদিন সেঞ্চুরি আর্কেডের তৃতীয় তলার অফিসে গিয়ে প্রতিবাদ করলে বাদীসহ অন্যদের মারধর করে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঘটনা জানাজানি হলে তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

প্রতারণার শিকার আলী আজগর বলেন, ‘আমি পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে এই চক্রের হাতে টাকা দিয়েছি। মালয়েশিয়াতে ভালো কাজের ব্যবস্থা করে দিবে, এই বলে আমার কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা নেয়। আমরা মোট ২৫ জন ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের জাল কাগজপত্র দিয়ে বিমান বন্দরে পাঠানো হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে জাল ভিসা, জাল বিমান টিকেট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার পেছনে কাজ করছে বিশাল একটি চক্র। বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে তারা বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয় তারা। এরপর ওই চক্রটি জাল ভিসা, টিকিট ও ইমেগ্রেশন কার্ড তৈরি করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে। জাল ভিসা ও টিকিট নিয়ে যখন মানুষ বিমানবন্দরে যায়, তখন কেবল বুঝতে পারে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় চক্রটির দালাল রয়েছে। তারা স্বল্পশিক্ষিত ও বিদেশ যেতে ইচ্ছুক মানুষকে টার্গেট করে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। এরপর জাল কাগজপত্র তৈরি করে কিস্তিতে টাকা নেয়। শেষ সময়ে সেই জাল কাগজপত্র দিয়েই বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ইমেগ্রেশন পুলিশ তাদের ফেরত পাঠায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মফিজ রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চক্রের চারজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এরমধ্যে শফিকুল ইসলাম মূলহোতা। আরও দুই তিনজন পলাতক আছে, যারা চক্রটির নেপথ্যে কাজ করে। আমরা তাদের নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

এসআই মফিজ আরও বলেন, ‘চক্রটির অন্যতম আরেকজন হাফিজুল ইসলাম হাফিজ এবং রোজিনা নামে আরেক নারী রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তাহলে তাদের জালিয়াতির বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’

এদিকে আসামিদের গ্রেফতারের পর সাতদিন করে রিমান্ড চাইলেও আদালত প্রত্যেকের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাদের পুনরায় রিমান্ড চাইবেন বলেও জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা।

শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষণা বলছে, বিভিন্ন দেশে অভিবাসন-প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতারণার শিকার শতকরা ৫১ ভাগের মধ্যে শতকরা ১৯ ভাগ মানুষ টাকা দেওয়ার পরও বিদেশে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাকি শতকরা ৩২ ভাগ বিদেশে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণার শিকার বাংলাদেশিরা গড়ে ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৭ টাকা করে হারিয়েছেন।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এধরনের ঘটনা সবসময়ই হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের অভিবাসন আইনে এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কঠিন শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। অভিবাসন আইনে কি কোনও মামলা হয়েছে আজ পর্যন্ত? অথবা মামলা হলেও একটি উদাহরণ দেখানো যাবে না যে, আইন প্রয়োগে সাজা পেয়েছে, যাকে আমরা দৃষ্টান্ত বলতে পারি।

তিনি আরও বলেন, যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত একটা অবস্থান নিয়ে অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
পিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগপিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার