X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যে যেন আটকে না যাই: শিক্ষামন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২৯আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:২৮

বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি

শিক্ষাখাতের ভুল ভ্রান্তি তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পরস্পর দোষারোপের সংস্কৃতির মধ্যে আমরা যেন আটকে না যাই। আমরা যেন আমাদের আসল উদ্দেশ্যটাকে হারিয়ে না ফেলি। আমার মন্ত্রণালয়ের ভুল-ভ্রান্তি আমি সাংবাদিকদের কাছে অবশ্যই জানতে চাইবো এবং বললে কিন্তু সেটাকে শুধরে নেওয়া সহজ হবে।

রবিবার ( ১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মিলনায়তনে শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের ( বিইআরএফ) অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ডা. দীপু মনি বলেন,  আমরা একজন আরেকজনকে দোষ দিতে পারি। একজন আরেকজনের সমালোচনা করতে পারি। কিন্তু পুরো উদ্দেশ্যটা কী? আমাদের সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলছেন, বাবা-মায়েরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা রটানো হচ্ছে, চতুর্দিকে এতো কথা। এই সব কথার পেছনে কিংবা সবশেষে আমাদের উদ্দেশ্যটা কী? আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের বাচ্চারা ভালো পড়াশোনা করুক আর সেই শিক্ষার মান যেন যথেষ্ট ভালো হয়। আমাদের এই শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দেবে, তারা একটি সুষ্ঠু পরিবেশ পাবে। তার যেইটুকু মেধা আছে, যোগ্যতা আছে, যতটুকু প্রস্তুতি আছে, সেই অনুযায়ী ফলাফল করবে। আর সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য যেটি তাহলো, তারা জ্ঞান আহরণ করে একজন ভালো মানুষে পরিণত হবে। উদ্দেশ্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে তাই। মাঝখানে আমার যেটা মনে হয়, আমরা পরস্পর দোষারোপ, সমালোচনার দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে যাই। আমরা আসল উদ্দেশ্যর জায়গায় আর পৌঁছাতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি যে আমাদের মধ্যে চেষ্টা সেরকম হওয়া উচিত। ত্রুটি, বিচ্যুতি থাকতেই পারে, যখন এত বড় একটা ব্যাপার, এত সংখ্যক পরীক্ষার্থী, এতগুলো প্রতিষ্ঠান, এতো সংখ্যক প্রশ্ন, তাতে আবার নানা রকমের দুষ্টচক্রের সম্পৃক্ততা, এরমধ্যে আবার অনেক টাকার লেনদেন, অনেক কিছু আছে। সেজন্য এরমধ্যে যে গোপনীয়তা রাখতে হয়, সেটা রাখতে গিয়েও এতে যে অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, তারও কিন্তু সুযোগ নেই। কারণ একটা কিংবা দুটো ধাপের পর আর কোনও ধাপ নেই। গোপনীয়তার কারণেই এতো কম ধাপ, যতবেশি ধাপে নিয়ে যাবেন, ততই সেই গোপনীয়তার সুযোগটা কমে আসবে। আমাদের কিন্তু এই সবদিক বিবেচনায় নিতে হবে।’        

সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে  শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা সরকার এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন। তাই আপনারা যে তথ্যগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেন, সেগুলো হতে হবে বস্তনিষ্ঠ। আপনাদের দায়িত্বের মধ্যে নিশ্চয়ই এটাও পরে যে সব তথ্য মানুষের কাছে দেওয়ার জন্য নাও হতে পারে। আপনি তথ্য পেলেন কিন্তু সেই তথ্য যদি ক্ষতিকর হয়, অযথা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং কোনও সৎ উদ্দেশ্য সেখানে পূরণ হবে না-সেক্ষেত্রে আপনি যদি সেই তথ্যকে শুধুমাত্র তথ্য হিসেবে দিয়ে দেন তাতে লাভের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে। প্রকাশনার যে এথিক্স আছে, এটি তার মধ্যে বিবেচ্য হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

ভুল-ভ্রান্তি তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে দীপু মনি বলেন, এখন সাতদিন ২৪ ঘণ্টা নিউজের যুগ। এখন অনেক কিছু পেছনে তাকিয়ে দেখার সময় হয় না। এটা শুধু আমাদের দেশের মিডিয়ার ব্যাপার না, সারা বিশ্বেই মিডিয়ার ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতা আছে। কাজেই কে কত আগে সংবাদটি দিতে পারবেন সেই প্রতিযোগিতায় গিয়ে অনেক সময় খবরের পেছনে আসলে কী আছে, সেটি যাচাই করা হয় না। অনেক সময় হয়তো সঠিক তথ্যও পাওয়া যায় না। অনেক সময় কম গুরুত্বের খবর অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়। এই সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমি বিশ্বাস করি যে আমরা আরও বেশি সচেতন, গঠনমূলক হতে পারি। আপনারা আমাদের কাজের কথাগুলো তুলে ধরেন, আর তাতে কিন্তু এই দিকগুলো বিবেচনায় নেওয়া নিশ্চয়ই দরকার রয়েছে। আর আমাদের যেখানে যত ভুল ভ্রান্তি পাবেন, সেগুলো নিশ্চয়ই ছাপাবেন। অনেক সময় আমরা কাজের মধ্যখানে থাকলে, ভেতর থেকে সবকিছু ভালোভাবে দেখা যায় না। কিছু কিছু জিনিস আছে ভেতরে থাকলে অনেক ভালো বোঝা যায়। আবার কিছু কিছু জিনিস আছে বাইরে থেকে দেখতে পারলে ভালো বোঝা যায়। আমার মন্ত্রণালয়ের ভুল-ভ্রান্তি আমি সাংবাদিকদের কাছে অবশ্যই চাইবো এবং বললে কিন্তু সেটাকে শুধরে নেওয়া সহজ হবে। কোনোকিছুর মানোন্নয়ন রাতারাতি হয় না, আর তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেই ধৈর্যটি কিন্তু আমাদের থাকতে হবে।   

অভিভাবকদের উদ্দেশে দীপু মনি বলেন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে কী হিসেবে চান? তারা কী সন্তানরা শুধুমাত্র জিপিএ ৫ পেয়েছে, সেটিই দেখতে চান? প্রতিবেশীদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাচ্চাকে এগিয়ে নিতে চান, নাকি সত্যিকারের একজন মানুষ হোক এটা চান? শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় জ্ঞান অর্জন, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা—সে জায়গায় আমরা আমাদের সন্তানকে গড়ে তুলতে পারছি কিনা তাতে শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তবে একইসঙ্গে বাবা-মায়েরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।          

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে সংগঠনের সাফল্য কামনা করেন এবং ভবিষ্যতে পারস্পারিক সহযোগিতা বজায় থাকবে বলেও জানান।

এর আগে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম আববাস স্বাগত বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি আপনাদের সহযোগিতা করবো। একইসঙ্গে সহযোগিতা চাইবো মাঠের রিপোর্টারদের জন্য। তাদের তথ্য পেতে এবং বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা সহযোগিতা করবেন। আপনারা বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ফোরামকে সহযোগিতা করবেন যেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সংগঠন চালাতে পারি।’
সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থী বেড়েছে, শিক্ষার পরিসর বেড়েছে। নানা গুজব বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, কিন্তু তাৎক্ষণিক বক্তব্যের জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় একজন মুখপাত্র নিয়োজিত রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলেও প্রথম দ্বিতীয় তা তৃতীয় স্থানসহ সারাদেশের মেধা তালিকা দেওয়া হয় না। তথ্য অধিকার আইনে এই তথ্য চাইলে ব্যক্তিগত তথ্য বিবেচনা করে তা দেওয়া হয় না। এসব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সবার দায়িত্ব আছে। সাংবাদিকের দায়িত্ব আছে সত্য প্রকাশ করা, প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে সেটা যাচাই করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। আমি আশা করি বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। আমরা জানি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ পেছনে চলে গিয়েছিল, আমরা তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমরা নিশ্চয়ই আশা করি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা বিষয়ক বিশিষ্ট সাংবাদিকদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছেন আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু, নিউজ টোয়েন্টিফোরের বার্তা সম্পাদক বোরহানুল হক সম্রাট, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক মানস ঘোষ, সমকালের প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম, একুশে টেলিভিশনের সাবেক বার্তা প্রধান ইব্রাহীম আজাদ, এনটিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি ফয়জুল্লাহ মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক অধ্যাপক আহাম্মেদ সাজ্জাদ রশীদ, এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

আরও উপস্থিত ছিলেন,  ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান  প্রফেসর এ.কে.এম. ছায়েফ উল্যা সহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা। এছাড়া বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের ( বিইআরএফ) সভাপতি ও চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম আববাসসহ কমিটির সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

/এসও/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না