X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইজতেমা পৃথক করেও সংঘাতের আশঙ্কা

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:০০আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:০০

 

বিশ্ব ইজতেমা (ফাইল ছবি) সংঘাত এড়াতে সরকার তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুই পক্ষকে পৃথক ইজতেমার অনুমতি দিলেও সংকট কাটেনি। সরকার দু’পক্ষকেই দু’দিন করে ইজতেমার অনুমতি দিলেও সেটি তারা মানছে না। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধীদের সমর্থন দিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিন ইজতেমায় অংশ নিতে তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সাদ অনুসারীরাও দু’দিনের পরিবর্তে তিনদিন ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে দু’পক্ষই সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে একে-অপরকে দুষছে।

জানা গেছে, তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দু’পক্ষকে সমঝোতায় এনে অভিন্ন ইজতেমা আয়োজনের চেষ্টা করে সরকার। তবে দফায়-দফায় বৈঠক করেও দু’পক্ষকে অভিন্ন ইজতেমা আয়োজনে একমত করা যায়নি। সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিবাদমান পক্ষগুলোর বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। দু’পক্ষকে ভিন্নভাবে  ইজতেমা না করে অভিন্ন ইজতেমা করার অনুরোধও করেন।  একই সঙ্গে দেশে তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনায় সংঘাত এড়াতে দু’পক্ষকে সংকট সমাধানের অনুরোধ করেন। তবে দু’পক্ষই অনড় থাকায় মেটেনি বিরোধ, বরং ইজতেমা বয়কটের কথা জানায় সাদ অনুসারীরা। পরবর্তী পৃথকভাবে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এ বছর চারদিন ইজতেমা হবে। সাদ বিরোধী অংশ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার পরিচালনা করবে। সাদ অনুসারী অংশ ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করবে।

পৃথক ইজতেমা হলেও মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি ইজতেমায় অংশ নেবেন না। বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয় সাদ অনুসারী ও সাদ বিরোধী পক্ষ। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে, ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি চারদিন টঙ্গী মাঠে ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি আয়োজন ও নিরাপত্তার উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, দু’পক্ষকে নিয়ে বুধবার বৈঠক করেন গাজীপুর সিটি মেয়র মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। সেই বৈঠকে তাবলিগের দু’পক্ষের প্রতিনিধি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদ বিরোধী অংশের তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা জোবায়ের আহমদের নেতৃত্বে ইজতেমা শুরু হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের আগে আখেরি মোনাজাত  করে তারা ইজতেমার মাঠ ত্যাগ করবেন। মাঠ ত্যাগ করার আগে তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন। একই সঙ্গে সাদ বিরোধী অংশে যোগ দিতে আগত বিদেশি মেহমানরা ইজতেমা শেষে উত্তরা হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করতে পারবেন।

অন্যদিকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ১৭ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর ইজতেমা মাঠে ঢুকবেন। ইজতেমায় মুসল্লিদের ব্যক্তিগত মালামাল ছাড়া অন্য মালামাল স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে।

এদিকে জানা গেছে, সরকার ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি চারদিন টঙ্গী মাঠে ইজতেমা আয়োজনের কথা বললেও দু’পক্ষই সরে এসেছে এ সিদ্ধান্ত থেকে। সাদ বিরোধীরা প্রচার শুরু করেছেন ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনদিন ইজতেমা হবে। সাদ বিরোধীদের সমর্থন দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী। সাদ বিরোধী অংশের ইজতেমায় জনসমাগম বাড়াতে মাদ্রাসা ও মসজিদের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারি আহমদ শফী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত আমাদের ওলামায়ে কেরামের দ্বীনি আমানত। এ আমানতের যথাযথ হেফাজত করা আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ মেহনতের গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি হচ্ছে টঙ্গী ময়দানের বিশ্ব ইজতেমা। আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এ ইজতেমায় সারা দেশের আলেম-ওলামা, ছাত্র, জনতা এবং তাবলিগের সাধারণ সাথীদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

এদিকে সাদ বিরোধীদের মতো সাদ অনুসারীরাও বাড়তি একদিন ইজতেমা চালিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছে। সাদ অনুসারী পক্ষের তাবলিগের মুরব্বি  আবদুল্লাহ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারেই ইজতেমার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু তারা (সাদ বিরোধী অংশ) অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা সরকার নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে থেকে তিনদিন ইজতেমা হবে বলে প্রচার করছে। এজন্য আমরাও সরকারের কাছে অতিরিক্ত একদিন সময় দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম, মৌখিক অনুমতিও পেয়েছি। ফলে আমরা সরকার নির্ধারিত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারির পর ১৯ ফেব্রুয়ারিও ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করবো।

এ বিষয়ে আশঙ্কা  প্রকাশ করে আবদুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করছে তারা (সাদ বিরোধীরা)। তারা প্রচার করছে শুধু ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা হবে। অনেক জায়গায় খবর পেয়েছি তাদের সঙ্গে ইজতেমায় অংশ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে আমরা সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনও জায়গায় আমাদের কেউ বাধাগ্রস্ত হবেন না।’

একই রকম আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সাদ বিরোধীরাও। তাবলিগের মুরব্বি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ‘আমরা কল্পনা করিনি কোনোদিন তাবলিগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ নৃশংস হতে পারে। ১ ডিসেম্বর তারা (সাদ অনুসারীরা) সেটি দেখিয়েছে। আমাদের ভয় পুরাপুরি কেটে যায়নি, তারা সুযোগ পেলে কিছু করতে পারে। তবে  আমরা কোনোভাবেই সংঘাত কামনা করি না।

 

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা