X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার অভাবে মাঝপথেই ফিরে যেতে হয় ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:১৯আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৯, ১৮:৫৭




ঢামেক হাসপাতালের শিশু ক্যান্সার বিভাগ ব্যয় বহন করতে না পেরে চিকিৎসা শেষ না করেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু ক্যানসার বিভাগের বেশিরভাগ রোগীকেই ফেরত যেতে হয়। প্যাথলজি টেস্ট, কেমোথেরাপি ও ব্লাড টেস্টসহ অন্যান্য খরচ চালাতে হিমশিম খায় দরিদ্র পরিবারগুলো। প্রাথমিকভাবে ধরা পড়া ক্যানসার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও টাকার অভাবে মাঝপথে ফিরে যাওয়া শিশুরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসলে এসব শিশুর ক্যানসার থেকে বাঁচানো যেত।

ঢামেক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে হাসপাতালের শিশু ক্যানসার ওয়ার্ডে ৭৩৭ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নেয়। যার মধ্যে মারা যায় ১৫৭ জন। চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায় ৮৭ জন। আংশিক চিকিৎসা নেওয়ার পর চলে যায় ২৬১ জন এবং পূর্ণ চিকিৎসা নেয় ৯৪ জন শিশু। এখন ২৯৭ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঢামেকের শিশু ক্যানসার বিভাগে গিয়ে জানা যায়, সেখানে যেসব শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের বেশিরভাগ পরিবারই দরিদ্র। যাদের পক্ষে ক্যানসার চিকিৎসার খরচ চালানো অসম্ভব। হাসপাতাল থেকে বেড, চিকিৎসাসেবা, নার্স, খাবার ও বিনামূল্যে কিছু ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্যাথলজি টেস্ট, কেমোথেরাপি, ব্লাড টেস্টসহ অন্যান্য খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারগুলো। বেশিরভাগ পরিবার চিকিৎসা শেষ না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এতে আক্রান্ত শিশুরা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

রাঙামাটি থেকে কন্যাশিশু ইনফ্রাকে নিয়ে ঢামেকের শিশু ক্যানসার ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন মা কোহিনুর বেগম। শিশুটির মুখে টিউমার। মা কোহিনুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে। সে টাকা খরচ করার সাধ্য আমার নেই, তাই আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই।’

ঢামেকের চিকৎসকরা জানান, ক্যানসার কোনও সাধারণ রোগ নয়। এর জন্য বিশেষ চিকিৎসা দিতে হয়। এখন দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা চালু হয়েছে। দেশি কোম্পানিগুলো কিছু ওষুধ তৈরি করছে, যার গুণগত মানও ভালো। সরকারিভাবেও কিছু ওষুধ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। এটা একটি আশার দিক। তবে চাহিদার তুলনায় এটা পর্যাপ্ত নয়।

ঢামেক হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু। তিনি ও তার দল ১৭টি বেডের শিশুর চিকিৎসা করান। তিনি জানান, এখানে এমন অনেক রোগী আছে যাদের জন্মের দিনই ক্যান্সার ধরা পড়েছে। শিশুদের ক্যানসারের মধ্যে রয়েছে— ব্লাড ক্যান্সার একিউট লিউকেমিয়া, ব্রেন টিউমার, লিম্ফোমা, কিডনির টিউমার, ঘাড়ের টিউমার, মাংস পেশির টিউমার, লিভারের টিউমার প্রভৃতি। ৫-১০ ভাগ শিশুর ক্যানসার জেনেটিক। পরিবেশগত কারণে আক্রান্ত হয় ১০ ভাগ। ৭৫ ভাগ ক্যানসার কারণ এখনও জানা যায়নি।

ঢামেক চিকিৎসকরা বলেন, এখানে কোনও রোগী আসলে তাকে দীর্ঘদিন থাকতে হয়। আমরা সাধারণত যেসব রোগী পাই, তাদের বেশিরভাগ বাবা-মায়ের হাতে তেমন অর্থ থাকে না। চিকিৎসা খরচ চালাতে পারে না, কান্নাকাটি করে। এই দৃশ্য অসহনীয়। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকে না। শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার।

শিশু ক্যানসার বিভাগের অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের শিশু ক্যান্সার ওয়ার্ডে ১৭টি বেডে রোগী আছে ৪৫ জন। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। কখনও কখনও জায়গার অভাবে কেবিনে শিশুকে ভর্তি করতে হয়। কেবিনে রোগী রাখলে চিকিৎসকদের সমস্যা হয়। ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ চিকিৎসা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই সামাজিকভাবে আর্থিক সহায়তার জন্য কেউ এগিয়ে আসলে খুব ভালো হয়। ব্লাড, প্লাটিলেট, এন্টিবায়োটিক এগুলো রোগীকে দিতেই হয়। এন্টিবায়োটিক সরকারের কিছু সাপ্লাই থাকে। কিছু ওষুধ রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়।

বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্ট এর প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বাংলা ট্র্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষে ক্যানসার রোগীকে সম্পূর্ণ ট্রিটমেন্ট দেওয়া সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তশালীরা যদি এগিয়ে আসে তবে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। ঢাকা মেডিক্যালের এই বিভাগ সরকারের অনুমতি নিয়ে জাকাত ফান্ড থেকেও অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।’

 

 

/টিওয়াই/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা