X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুড়ে যাওয়া হাসপাতালেই ফিরছে রোগী, চলছে চিকিৎসা

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৬আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:৫২

সার্জারি হয়েছে স্ত্রীর, তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আবার হাসপাতালে এসেছেন এই ব্যক্তি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আগুন লাগার পর অনেক রোগীই অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ফিরে এসেছেন। নিরুপায় হয়ে নানা ভোগান্তির মধ্যেই রোগীরা এখানে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর মধ্যেই সেবা দিতে চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে দুটি ওয়ার্ড। নষ্ট হয়ে গেছে স্টোর রুমের অনেক ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রী। চিকিৎসক ও নার্সদেরও বসার জায়গা নেই।

শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক এবং সাত নম্বর ওয়ার্ডে সব ওয়ার্ডের রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। নার্সরা ডিউটি করছেন। তবে আগুনে বেশির ভাগ ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যরা বসার জায়গা না পেয়ে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছেন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালের স্টোর রুম থেকে আগুন লাগে। রাত ৮টা বিশ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় হাসপাতালে এক হাজার ১৭৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। যারা বেশি অসুস্থ তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে ৩২২ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফেরত এসেছে। এদিন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। হাসপাতালের ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে গাইনি ও শিশু ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার নতুন কোনও শিশু রোগী ভর্তি করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুদের পার্শ্ববর্তী শিশু হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি জামতলার রীনা রানী কর্মকার এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬ দিন যাবৎ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগুনের সময় রুমে ছিলাম। সবাই চিৎকার করছে, “আগুন, আগুন”। বের হয়ে দেখি, সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরে গেছে। পরে আমরা বাইরে আসি। পরিচিত একজনের বাসায় রাতে ছিলাম। সকালে আবার এসেছি। আমার গলার মাংসপেশি বেড়ে গেছে। অপারেশন করতে হবে। অপারেশনের তারিখ দিয়েছে রবিবার।’

রোজিনা বেগম ও মো. ইসরাফিল দম্পতির ছেলে জুনায়েদ চার দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি। ইসরাফিল বলেন, ‘ছেলের নিউমোনিয়া তাই ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ছয় নম্বর বেডে ভর্তি ছিলাম। আগুন লাগার পর দেড় ঘণ্টা বাইরে অপেক্ষা করে বাসায় চলে গেছি। শুক্রবার সকালে আবার হাসপাতালে এসেছি। আসার পরে আমাকে একটা ইমার্জেন্সি টিকেট দিয়েছে। দুটি ওষুধ বাইরে থেকে কেনা লেগেছে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, এখানকার অবস্থা খুব খারাপ, তাই বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হবে।’

মোসা. নাসিমা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার রোগী মো. মফিজুর রহমান ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। আগুন যখন লাগে তখন আমরা এইখানে (নিচতলায় বারান্দার ফ্লোরে) ছিলাম। আমার ছেলে তিনতলায় দেখতে গিয়েছিল। যখন পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায় তখন অনেকগুলো মানুষ এখানে এসে আমাদেরকে ধরে রাস্তায় নিয়ে যায়। রাতে আরেক মেডিক্যালে গিয়েছিলাম। এইমাত্র এই হাসপাতালে আসলাম।’

সাত নম্বর ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স কৃষ্ণা কুণ্ডু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গাইনি ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আমাদের এখানে (সাত নম্বর ওয়ার্ডে) রোগী আসছে। আমাদের ৫৮টা বেডের সবগুলোতেই রোগী ভর্তি আছে। তাই অন্য ওয়ার্ড থেকে আসা রোগীদের আমরা বেড দিতে পারছি না। আমাদের ওয়ার্ডে ফ্লোরিং সিস্টেমও নেই। তাই এত রোগীর কীভাবে চিকিসা দেওয়া হবে  বুঝতে পারছি না।’

পুড়ে যাওয়া যাওয়া শিশু সার্জারি ওয়ার্ড শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. ইবনেসুল সিদ্দিকী মেহেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব ইউনিটের রোগীকে এক ও সাত নম্বর ওয়ার্ডে রাখছি। এগুলো পেয়িং বেড, কিন্তু এখন তো দুর্যোগ চলছে। তাই ওখানেই আমাদের রাখতে হচ্ছে। কারণ পশ্চিম দিকের ওয়ার্ডগুলো ধোঁয়ায় ক্ষতিগস্ত হয়েছে। সেখানে শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। গতকাল থেকে অনেক রোগীকে আমরা অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে যারা জায়গা পাচ্ছে না বা ফ্লোরে আছে সেইরকম কিছু রোগী ফিরে আসছে। তাদের মধ্যে যারা ভর্তির উপযোগী তাদের ভর্তি করছি। কিন্তু এখন ওয়ার্ডের জায়গাও শেষ হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে আমরা রোগী মেঝেতে রাখব। কিন্তু অনেক শিশু রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে। সবখানে তো অক্সিজেনের স্ট্যান্ড নেই। আবার অনেক রোগীকে ফ্লুইড দেওয়া লাগে। সেসব রোগীকে ফ্লুইড দেওয়ার জন্যও জায়গা লাগে। এজন্য ঝোলানোর মতো হ্যান্ডেল নেই। সাধ্য অনুযায়ী আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

মেডিসিন বিভাগের ভর্তিকক্ষে কর্মরত ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. হিমেল পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিসিন রোগীর জন্য এক নম্বর ওয়ার্ড। এখন আপাতত নারী রোগীদের এক নম্বর ওয়ার্ড রাখছি। এখন এক নম্বর ওয়ার্ড ও সাত নম্বর ওয়ার্ডে কিছু রোগী ভর্তি আছে। সাত নম্বর ওয়ার্ডটি পেয়িং বেড। এখন আপাতত ওখানে রোগী রাখছি। পরে সরিয়ে নেব।’

জরুরি বিভাগের টিকেট বিক্রেতা মো. মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের মোট ৭৩ টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।’ জরুরি বিভাগে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ইশরাত জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,  সকাল থেকে ৫০ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে।’

হাসপাতালের ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা আমরা ধারণা করছি। এ লক্ষ্যে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানাবে। শুক্রবার হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া তদন্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে, স্টোরের সবপণ্যই নষ্ট হয়ে গেছে।’

ছবি : তাসকিনা ইয়াসমিন

 আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে আগুন

 

 

 

/টিওয়াই/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ