X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারি গোয়েন্দা কারা, কী কাজ তাদের

জামাল উদ্দিন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১৬আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১৬

গোয়েন্দাগিরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং  রাজনৈতিক কারণেও বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে গোয়েন্দারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে  বর্তমানে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে গোয়েন্দাবৃত্তি করছে।  সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে কারও গোয়েন্দাবৃত্তি করার বৈধতা নেই।আইন অনুযায়ী এমন কোনও কাজে সরকারের অনুমোদন দেওয়ারও সুযোগ নেই।

প্রাইভেট গোয়েন্দা কারা

বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনেই নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে নামে-বেনামে। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নিজেদের মতো করে গোয়েন্দাগিরি করছে। এর মধ্যে আছে প্রাইভেট ডিটেকটিভ, প্রাইভেট ডিটেক্টিভ বিডি, স্পাই এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ, শার্প ডিটেক্টিভ প্রাইভেট লিমিটেড, পার্সোনাল প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর অব ডিটেক্টিভ, অপরাধ অনুসন্ধান প্রাইভেট লিমিটেড এবং প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর (গোয়েন্দা) এজেন্সি, ঢাকা ডিটেকটিভস ও প্রাইভেট ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (পিআইএ)।

যেসব কাজ করে তারা

অপহরণ, চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক বিষয়ে তদন্ত ও রহস্য উদঘাটন, কোনও ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড, সম্পত্তি ও কোনও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের আগে তাদের ভেরিফিকেশন, করপোরেট ইনভেস্টিগেশন, টিনএইজার মনিটরিং, নিখোঁজ ব্যক্তির বিস্তারিত জেনে নেওয়া, কারও পারিবারিক তথ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার কথা এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বলা আছে।  বেসরকারি এসব গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

ইন্টারনেটে ঠিকানা ও ফোন নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করা হয় ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। ঠিকানা ভুল থাকলেও মোবাইল নম্বরগুলো ছিল সচল। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজনের সঙ্গে কথা হয়। তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি একটি ঠিকানা দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদর দফতরের বিপরীত পাশে একটি পুরনো ভবনের (৪৬ সিদ্ধেশ্বরী, সার্কুলার রোড) তৃতীয় তলায় ওই প্রতিষ্ঠানে অফিস। সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রাইভেট ডিটেকটিভ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা রয়েছে। যার সম্পাদক ও প্রকাশক হচ্ছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

বেসরকারিভাবে গোয়েন্দাগিরি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিনি আগে ঠিকাদারি করতেন। পরে প্রাইভেট ডিটেকটিভ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। প্রায় ১৮ বছর আগে তিনি ওই পাক্ষিক পত্রিকার ডিক্লারেশন নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে তিনি একটি প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরেও যোগাযোগ করেছিলেন। এক্ষেত্রে কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অনাগ্রহে আর সেটা করতে পারেননি।’ তবে ব্যক্তিগতভাবে কেউ তাদের সহযোগিতা চাইলে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে তারা তথ্য দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তিনি তার পত্রিকার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মাধ্যম কাজে লাগান। কাজের ধরন হিসেবে তারা টাকার পরিমাণ লিখিত চুক্তিতে উল্লেখ করেন।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বেসরকারিভাবে গোয়েন্দা কাজে বাংলাদেশে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি সরকার সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখতে পারেন।

বেসরকারি গোয়েন্দাবৃত্তি নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (পুলিশ-১) ড. মো. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারিভাবে গোয়েন্দাবৃত্তির কোনও সুযোগ নেই। দু’একজন আমাদের কাছে এসেছিল এ নিয়ে কাজ করতে। আমরা সরাসরি তাদের নিষেধ করে দিয়েছি। আমাদের আইন ও বিধিতে এমন কাজের সুযোগও নেই।’

পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের আওতাধীন বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। পুলিশেও একাধিক গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে তাদের কাজও ভাগ করা আছে। এর বাইরে বেসরকারিভাবে গোয়েন্দাবৃত্তি করার কোনও বৈধতা নেই। দেশের কোনও নাগরিক যদি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পরিবারের কোনও সদস্যের গতিবিধির বিষয়ে ভেরিফিকেশন করাতে চান, তাহলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ। বাইরের কারও দিয়ে এগুলো করাতে গিয়ে বরং প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে পথে না যাওয়াই ভালো।’

এ প্রসঙ্গে পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘বেসরকারিভাবে গোয়েন্দাবৃত্তি করার কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। কোনও ভুক্তভোগী যদি এ বিষয়ে তাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে তারা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়াও কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে গোয়েন্দাবৃত্তি করছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখবেন।’

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ