সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর নানা কারণে বন্ধ ছিল এই নির্বাচন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর ২৮ বছরে শুধু ডাকসু নয়, কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদেই নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘদিন পর ১১ মার্চ হচ্ছে অনেক আকাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন। অতীতের নির্বাচনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনে গঠনতন্ত্র থেকে শুরু করে, ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা, ব্যালট পেপার, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে এসেছে নতুনত্ব। এসব পরিবর্তন ডাকসু নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজনে সহায়ক হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছর পর এ ধরনের গুরুত্ববহ বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করতে পদে পদে আমাদের বিভিন্ন বিষয় নতুন করে ভাবতে হয়েছে, সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধিসহ সবকিছুতেই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় রাখতে হয়েছে নতুন করে। প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে; এর সুফল প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে গভীরভাবে অনুভূত হবে। এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক সম্মানিত সহকর্মী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষ জনবল হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবস্থাপনায় ডাকসু নির্বাচন পরিচালিত হওয়ার পথ তৈরি হলো– একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায়।’
ডাকসু নির্বাচনে যে পরিবর্তনগুলো এসেছে–
গঠনতন্ত্র সংশোধন
সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছিলো। এরপর আবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এবারের ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে চারটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন ও সংযোজন হয়েছে। সেগুলো হলো– এমফিলে অধ্যয়নরতদের ভোটার ও প্রার্থিতার সুযোগ দেওয়া, প্রার্থিতার বয়সসীমা ৩০ নির্ধারণ এবং ডাকসু সভাপতি ভিসির ক্ষমতা হ্রাস করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সিন্ডিকেটের প্রতি ন্যস্ত করা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ডাকসু নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের কয়েকটি অনুচ্ছেদ সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে– যেসব শিক্ষার্থী প্রথমবর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত আছেন এবং যারা বিভিন্ন আবাসিক হলে আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সংযুক্ত রয়েছেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখে যাদের বয়স কোনওক্রমেই ৩০-এর অধিক হবে না কেবল তারাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদের ভোটার হতে পারবেন।
ভোটারই প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন এমন বিধান রেখে গঠনতন্ত্রে বলা হয়, যারা সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্স, প্রোগ্রাম, প্রফেশনাল এক্সিকিউটিভ, স্পেশাল মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, এমএড, পিএইচডি, ডিবিএ, ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স অথবা এ ধরনের অন্যান্য কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন তারা ভোটার হতে পারবেন না।
তবে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীরা যে কোর্সেই অধ্যয়নরত থাকুন না কেন, তারা ভোটার হতে পারবেন না। সরকারি-বেসরকারি অথবা দেশে বা বিদেশে যেকোনও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনও শিক্ষার্থী ভোটার হতে পারবেন না। অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষার্থী ভোটার হতে পারবেন না।
দুটি নতুন পদ সৃষ্টি
অতীতের ডাকসুতে কমন রুম, সায়েন্স কমন রুম এবং ছাত্রীদের কমন রুম বিষয়ক সম্পাদক– এই তিনটি পদকে একত্রে কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদ নাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নামে দুটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সুপারিশ, প্রস্তাব এবং সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে কয়েকটি সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।’
ভোটার সংখ্যা
ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে ২৮ হাজার ৬৯০ জন ভোটার ছিল। এখন ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৯২৩ জন।
ভোটগ্রহণের সময়
অতীতের ডাকসু নির্বাচন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হলেও এবারের ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা।
ব্যালট পেপার
অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) ফর্মে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি পদের জন্য আলাদাভাবে ব্যালট নম্বর ও প্রার্থীর নাম ওএমআর ফর্মে থাকবে। ভোটার নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে প্রার্থীর নামের ডানপাশে নির্ধারিত ঘরে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি ভোটারকে ভোট দিতে হবে ৩৮টি।
ব্যালট বাক্স
অতীতে সবুজ রঙের অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হলেও এবারের নির্বাচনে ব্যবহার করা হচ্ছে ছাই রঙের স্টিলের ব্যালট বাক্স। এই ব্যালট বাক্স ব্যবহারের বিষয়ে ডাকসু নির্বাচনের কর্মকর্তা আবদুল বাছির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওএমআর ব্যালট পেপার ভাঁজ করা যাবে না। তাই আমাদের বড় ব্যালট বাক্স প্রয়োজন ছিলো।’
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে মেটাল ডিক্টেটর ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে।
এই পরিবর্তনগুলোর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে ও সুন্দর ব্যবস্থাপনায় ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার পথ তৈরি হলো উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘এ দাবি করা তুলনামূলক কঠিন যে, নির্বাচনের সকল কর্মযজ্ঞ ও আয়োজন একেবারেই ত্রুটিমুক্ত, নিখুঁত। অনিচ্ছাকৃত বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি হয়তো রয়েছে। তবে এতটুকু জোর দিয়ে বলা যায় যে, চিফ রিটার্নিং অফিসার ও তার টিম, হলসমূহের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা, আমাদের সহকর্মীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই।’