X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি, ক্ষমা চাইলেন শুভঙ্কর সাহা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ মার্চ ২০১৯, ১৫:৫২আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৯, ১৬:১৭

সুপ্রিম কোর্ট

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ শীর্ষক বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপিয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় ওই বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল  আমিন সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান।

মঙ্গলবার শুনানির শুরুতেই শুভঙ্কর সাহার কাছে আদালত জানতে চান— বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি কিভাবে ঘটলো? জবাবে শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বই প্রকাশে একটি টিম দায়িত্বে ছিলো। আমরা বইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কিত বঙ্গবন্ধুর কোনও ছবি না পাওয়ায় বইয়ে তার কোনও ছবি দেওয়া হয়নি। এজন্য আমি আদালতের কাছে পুরো টিমের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।’

তখন আদালত বলেন, ‘আইয়ুব খান, মোনায়েম খানকে বইতে হাইলাইট করলেন। অথচ বঙ্গবন্ধুর একটা ছবিও পেলেন না?’

শুভঙ্কর সাহা উত্তরে বলেন, ‘বইতে আইয়ুব খানকে স্বৈরাচার হিসেবেই অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে।’ এসময় বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রকাশ না করার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পুনরায় শুভঙ্কর সাহা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

আদালত এ পর্যায়ে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেনকে বলেন, ‘ক্ষমা চেয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।’

পরে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস শীর্ষক বইটির পুরনো সংখ্যাগুলো কী পর্যায়ে রয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলেন।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের পুরনো সব সংখ্যা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ ও বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করেন আদালত। আদালতে হাজির হয়ে তাকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তভুর্ক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে’ বলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি  প্রতিবেদন দাখিল করেছিল হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা ও সম্পাদনা নামে দু’টি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দু’টি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্র ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় চিহ্নিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের  গভর্নর বইটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বইটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়।

এরইমধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক  ‘বঙ্গবন্ধুর সংশ্লিষ্ট ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি’— এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। এটা ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বলে কমিটি মনে করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘গ্রন্থটিতে পকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের  ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল বরে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেছে।’

/বিআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউআইইউতে ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং এর শাসন কাঠামো’ শীর্ষক লেকচার অনুষ্ঠিত
ইউআইইউতে ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং এর শাসন কাঠামো’ শীর্ষক লেকচার অনুষ্ঠিত
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
রেসিপি: মসুরের ডাল দিয়ে হাতে মাখা পুঁই শাক
রেসিপি: মসুরের ডাল দিয়ে হাতে মাখা পুঁই শাক
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়