X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাত একটা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করে বাড়ি ফিরেছিলেন ডা. রাজন

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৭ মার্চ ২০১৯, ২৩:৫৮আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০৫

 

ডা. রাজন কর্মকার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়  (বিএসএমএমইউ) এর ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজন কর্মকারের আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার সহকর্মী, বন্ধু ও স্বজনরা। আজ রবিবার (১৭ মার্চ) সারাদিন তার বন্ধু, সহকর্মী এবং চিকিৎসক সমাজের নেতৃবৃন্দরা স্কয়ার হাসপাতাল এবং থানায় ছুটোছুটি করে সময় কাটিয়েছেন। তাদের অনেকে জানান, গত শনিবার রাত একটা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করে ডা. রাজন বাড়ি ফেরেন।
ডা. রাজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৯৯৬ সালের ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। সেই ব্যাচের ছাত্র ও রাজনের বন্ধু ডা. রিপন দাস। তার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। ডা. রিপন বলেন, ‘আমরা সকালে খবর পেয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না আমাদের প্রিয় বন্ধু রাজন আর আমাদের মাঝে নেই। আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করি না যে রাজন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। আমাদের ধারণা এটা অপমৃত্যু। কারণ, ওর জীবনে এর আগেই পরিবার থেকে একটা আঘাত এসেছে। ওকে এর আগে একবার মারধর করা হয়। তখন সে এই স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে এক সপ্তাহ ভর্তি ছিল। এটা দেড় বছর আগের ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘গতরাত একটা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করেছে রাজন। এরপর সে বাসায় গেছে। রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসায় পরিবারের সঙ্গে সে থাকতো। এসময় তার স্ত্রী রাত তিনটার দিকে ওর মাকে ফোন করে খুব বাজে কথা বলে। এরপরই শোনা যায় রাজন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালের এমবিবিএস ৩৯তম ব্যাচ। রাজন ডেন্টাল অনুষদের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র ছিল। সে পড়ালেখায় খুবই মেধাবী ছিল এবং খুবই ভালো মানুষ ছিল। খুবই অসাধারণ একজন মানুষ ছিল। ওর কোনও ধরনের কোনোরকম বদনাম নেই। ও ভালো ছিল বলেই আজ ওর মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই প্রায় একশজন চিকিৎসক হাসপাতালে ছুটে এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এসেছেন।’

তিনি বলেন, নোয়াখালীর মাইজদীতে ওর বাড়ি। ওর বাবা-খুবই অসুস্থ তারা আসতে পারেননি। তার মামা সবকিছু দেখছে। আমরা চাই তার একটা ময়নাতদন্ত করা হোক। এটা হলে সঠিক বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

আরেকজন ডেন্টাল সার্জন নাম প্রকাশ  না করার শর্তে বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, তার মৃত্যুর অল্পসময় আগে তার মাকে ফোন করে জানানো হয় আপনার ছেলেকে হত্যা করা হবে। এরপর ফোনে তার মৃত্যুর খবর আসে। তাই আমরা এটাকে কোনভাবেই হৃদরোগে মৃত্যু বলে মনে করি না।

ডেন্টাল সার্জনরা জানান, ডা. রাজন কর্মকার ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তিনি বিডিএস শেষ করেন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। টানা দশ বছর চিকিৎসা বিষয়ক পড়াশোনা শেষে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল ডেন্টাল সার্জন হন। যা দেশে সংখ্যায় খুবই কম, মাত্র ১৫০ জন।

সহকর্মীর মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তায় প্রায় একশ’ চিকিৎসক মিছিল করে ময়নাতদন্ত শেষে সুষ্ঠু তদন্ত এবং তার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। তাদের মতে, তাকে পারিবারিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। 

ডা. রাজন কর্মকারের মৃত্যুর খবর শোনার পরই হাসপাতালে ছুটে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং অন্যরা। উপাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার মৃত্যু আসলে কীভাবে হয়েছে সেটি জানার স্বার্থে তার ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনাকে রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে আনা হয়। এখানে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা ইসিজি করে তার হার্টের কোনও কার্যক্রম দেখতে পাইনি।’

ডা. রাজন কর্মকারের স্ত্রীও পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি বিএসএমএমইউ এর সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণা রানী মজুমদার। তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে এটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডা. রাজন কর্মকারের মামা সুজন কর্মকার রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আর রাজনের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!