X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ অনেক, ঘাটতি বাস্তবায়ন কৌশলে

উদিসা ইসলাম
২১ মার্চ ২০১৯, ২০:৩০আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৯, ২০:৩০

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ অনেক, ঘাটতি বাস্তবায়ন কৌশলে একের পর এক ট্রাফিক সপ্তাহ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরেও ফেরানো যায়নি সড়কের শৃঙ্খলা। ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেই মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস -এর শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। প্রায় এক বছর পর আবারও রাস্তায় নেমে রাজধানী অচল করে দেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি নিরাপদ সড়ক। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান একের পর এক উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি যদি বাস্তবায়ন কৌশল শক্তিশালী হতো তাহলে সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো, সড়কে শৃঙ্খলাও ফিরতো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তত ২০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে। সবারই নানা মেয়াদের প্রকল্প আছে। কিন্তু প্রকল্পগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পৃক্ত। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর কৌশল গ্রহণ জরুরি। এই বিষয়টি কেউ বিবেচনায় নিতে চান না। কোনও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সমাধানে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রবণতা বেশি।
সড়কে লেন ব্যবস্থা, ব্যস্ত সময়ে সিটিং সার্ভিস না রাখা, চুক্তিতে বাস চালানো বন্ধ, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা, হাইওয়েতে বিভিন্ন সতর্কতা সাইনবোর্ডসহ বেশকিছু উদ্যোগ নানা সময়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও সড়কের দুর্ঘটনা এখন মহামারি রূপ ধারণ করেছে। সড়কে সিগন্যাল বাতি ব্যবস্থা ঠিক নেই। প্রাইভেটকার ও মোটরবাইকের ফিটনেসে যত মনোযোগ বাস ট্রাকের ফিটনেস নিয়ে ততটা মাথাব্যাথা নেই। চালকের বেপরোয়া মনোভাব বন্ধ হয়নি, যেভাবে খুশি সেভাবে যাত্রীদের ওঠানামা করতে বাধ্য করা- সবই চলছে সড়কে।
বাংলাদেশে গত বছর ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। রাজধানীতে গত বছরের ৩ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় রাজীবের বিচ্ছিন্ন হাত দুই বাসের মাঝে আটকে থাকার ছবি, সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাস্তা পার হতে গিয়ে পা হারিয়ে গৃহকর্মী রোজিনার মৃত্যু এবং ২৯ জুলাই শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনার পর বারবার উচ্চারিত হয়েছে নিরাপদ সড়কের দাবি। কিন্তু ২০১৯ সালে পরপর কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, সে সময় যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল তার কোনোটিই বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কের পরিবহন ব্যবস্থাপনার অনেকগুলো অংশ মিলে একটি ব্যবস্থা দাঁড়ায়। সেফটি একটি বিষয়, শৃঙ্খলা একটি বিষয়। আমরা সাধারণত তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেই- পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও আইনের প্রয়োগ। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না কারণ আইনের প্রয়োগ নেই। এছাড়া চাহিদা মাফিক পরিকল্পনা না করে অন্য ধরনের প্রকল্পে মনোযোগ বেশি দেওয়ায় আসল কাজটি হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাকেন্দ্রিক দুর্ঘটনায় ৪৬ শতাংশই পথচারী। তার মানে পথচারীদের জন্য যে নিরাপদ অবকাঠামো দরকার সেটা দিতে পারছি না। চালকের শাস্তি বা তার জন্য যা কিছু প্রযোজ্য সেগুলোতেও ঘাটতি থাকে। বাসগুলো বিশৃঙ্খল থাকে কারণ তারা যেখানে-সেখানে যাত্রী তুলতে চায়। একটি আরেকটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলে। আবার একই মালিকের দুই বাসও প্রতিযোগিতা করে। ফলে আমরা বলেছিলাম কোম্পানি করে দিতে, সেটাও হয়নি। এক এক করে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হবে কী করে সেই পরিকল্পনা নেই। কৌশলের জায়গায় ঘাটতি আছে।’
সব ধরনের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আছে, যারা সড়কে নিয়ম মানবে না তাদের আগামীতে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী খান। তিনি বলেন, ‘সবসময় বলা হয়, চুক্তিতে বাস চলে। আমরা সেটি নিষেধ করে দিয়েছি। কেউ যদি এরপরও চুক্তিতে চালায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগেও এ ধরনের কথা বলা হয়েছিল উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এটি আমাদের একার কাজ না। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট জায়গায় না থেমে যেখানে-সেখানে যাত্রীদের নামতে বাধ্য করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা চালকদের একার বিষয় বলে আমি মনে করি না। যাত্রীরাও তাদের সুবিধা অনুযায়ী নামতে চায়। বাসস্ট্যান্ড বিষয়টাই রাখা সম্ভব হয়নি দু’পক্ষের কারণে। যেখানে নামতে চায় সেখানে গাড়ি না থামালে যাত্রীরা প্রভাব খাটায়। আমরা সবাই মিলে ঠিক না হলে শৃঙ্খলা আসবে না।’
সড়কের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে যে প্রকল্প বা উদ্যোগ সেখানেই সমন্বয়ের অভাব আছে উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বাংলা বলেন, ‘কেবল সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই তা নয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে একই সংস্থার মাঠ পর্যাযের কর্মকর্তার সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ের ঘাটতি আছে এমনও দেখেছি। মাঠে ব্যবস্থাপনায় জড়িত যারা তাদের আরও প্রশিক্ষিত করতে হবে বলে আমি মনে করি। জনগণকে সচেতন করে কাজগুলোর মধ্যে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’

আরও পড়ুন: সুপ্রভাত ও জাবালে নূরের বাস চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা

                সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ প্রস্তুত, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

              সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি হবে: মেয়র আতিকুল

/ইউআই/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউআইইউতে ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং এর শাসন কাঠামো’ শীর্ষক লেকচার অনুষ্ঠিত
ইউআইইউতে ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং এর শাসন কাঠামো’ শীর্ষক লেকচার অনুষ্ঠিত
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
রেসিপি: মসুরের ডাল দিয়ে হাতে মাখা পুঁই শাক
রেসিপি: মসুরের ডাল দিয়ে হাতে মাখা পুঁই শাক
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়