X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সংকটে ব্যাহত শাহজালালের নিরাপত্তা

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৪ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৯আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:৩০





জনবল সংকটে ব্যাহত শাহজালালের নিরাপত্তা

প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম থাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এক পদের ব্যক্তিকে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্য পদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি যেমন থেকেই যাচ্ছে, তেমনি দূর হচ্ছে না যাত্রীদের ভোগান্তিও। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, নতুন জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ সংকট দূর হবে।

সম্প্রতি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশসহ কয়েকটি ঘটনায় নতুন করে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূলত দুই ধরনের— ফিজিক্যাল সিকিউরিটি এবং এভিয়েশন সিকিউরিটি। ফিজিক্যাল সিকিউরিটির আওতায় বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন, রানওয়ে, অপারেশন টাওয়ার, রাডার স্টেশন, মার্কার, ভিওআর, লোকালাইজার, গ্লাইডপাথসহ সব ধরনের স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো হয়। আর এভিয়েশন সিকিউরিটির আওতায় বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের সময় যাত্রীর দেহ তল্লাশি, লাগেজ চেক, কার্গো চেক, স্ক্রিনিং, ফ্লাইট সেফটিসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো করা হয়।
সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফিজিক্যাল সিকিউরিটির দায়িত্বে রয়েছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এএপিবিএন)। অন্যদিকে এভিয়েশন সিকিউরিটির কাজ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিরাপত্তাকর্মীরা।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনালে গেট রয়েছে ৬টি। এসব গেটে দেহ তল্লাশি ও ব্যাগেজ স্ক্যানিং শেষে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন যাত্রীরা। তবে স্ক্যানিং মেশিন অপারেটরসহ নিরাপত্তাকর্মীর সংকট থাকায় সব গেট সচল রাখা হয় না। বেশিরভাগ সময় দুটি গেটের মাধ্যমে যাত্রীদের বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকানো হয়। ফলে যাত্রীদের দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ লাইনে।

সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রায় ৬০০ জন কর্মী ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকেন। এরমধ্যে বেবিচকের নিজস্ব কর্মী প্রায় ৩৫০ জন। বাকিরা বিমানবাহিনী, পুলিশ ও আনসারের সদস্য।


জনবল সংকটে ব্যাহত শাহজালালের নিরাপত্তা

সূত্র বলছে, প্রেষণে নিযুক্ত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের এভিয়েশন সিকিউরিটি সংক্রান্ত পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেবিচকের টাকায় প্রশিক্ষণ পাওয়া কর্মীদের মধ্যে কিছুসংখ্যক আবার অল্প সময়ের মধ্যে ফিরে যান নিজেদের বাহিনীতে।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, একজন স্ক্যানার মেশিন অপারেটর ২০ মিনিট স্ক্যান করার পর ৪০ মিনিট বিশ্রাম নেবেন। তবে লোকবল কম থাকায় এ নিয়ম মানা যাচ্ছে না। অন্যদিকে একটি স্ক্যানার মেশিনে দুজন কর্মী থাকার কথা থাকলেও তা মানা হয় না।
অভিযোগ আছে, নিরাপত্তাকর্মীরা স্ক্যান করার সময়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকেন, মোবাইল ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকেন, অন্য লোকের সঙ্গে গল্প করেন, পত্রিকা পড়েন, খাবার খান ইত্যাদি।
শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহন স্থগিত ছিল। এরপর দেশটির পরামর্শে রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শক হিসেবে। চুক্তি অনুসারে দুই বছরে রেডলাইনকে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রায় দুই বছর পর বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আকাশপথে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ‘কর্মচারী চাকুরি প্রবিধানমালা-২০১৮’-এর খসড়া ও নতুন সৃষ্ট পদের তফসিলের খসড়া গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ১৮ অক্টোবর ভেটিংয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বেবিচক থেকে একই বছরের ১৩ নভেম্বর ৫৬ ক্যাটাগরির দেড় হাজার পদের নাম পরিবর্তনের তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুসারে পাঠানো হয়। ১১ ডিসেম্বর বেবিচকের পর্ষদ সভায় ‘কর্মচারী চাকুরি প্রবিধানমালা’ অনুমোদিত হয়। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য গত ১৬ জানুয়ারি সেটি বিমান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শাহজালালের এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক) অপারেশনের পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে ৬২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের প্রশিক্ষণ শেষে যুক্ত করা হবে। সিভিল এভিয়েশনের নতুন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ চলমান আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে জনবল সংকট দূর হবে।’
জনবল সংকট থাকলেও নিরাপত্তার দুর্বলতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘গত বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইকাও অডিট করেছে, সেখানে আমরা ৮৯.৭৬ ভাগ নম্বর পেয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের না হলে এ ফল পাওয়া সম্ভব হতো না।’

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা