X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে শিশু ক্যানসার চিকিৎসায় মাত্র ২১ বিশেষজ্ঞ ও ৯৭ বেড

তাসকিনা ইয়াসমিন
০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১২:২৩আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:২৮

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি ওয়ার্ড





প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে তাদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বেড। সারাদেশে মাত্র ২১ জন শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিচ্ছেন। আর এসব শিশুর জন্য বেড বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৯৭টি, যা মোট রোগীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নার্স- টেকনিশিয়ানেরও ঘাটতি রয়েছে। দেশের হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যানসারে আক্রান্ত দরিদ্র শিশুদের চিকৎসা খরচ বহন করতে পারে না তাদের পরিবার। তাছাড়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও কম, যা বাড়ানো দরকার। প্রয়োজন এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের সঠিক মূল্যায়ন করা।
বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কথা বলে জানা যায়, ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৩১টি বেড রয়েছে। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৭টি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৫টি, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে আটটি, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ছয়টি, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১০টি, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ১০টি বেড রয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল ও সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নির্দিষ্ট সিট বরাদ্দ নেই।

ঢামেক হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউতে ১৯৯০ সালে শিশু ক্যানসার বিভাগ চালু হয়। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমএ মান্নান এ সেবা চালু করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শুরু হয়েছে। এখন সারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে শিশুদের এই চিকিৎসা চালু হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।’

ঢামেকের এই চিকিৎসক বলেন, ‘বেশিরভাগ শিশুর ক্যানসারের কারণ এখনও অজানা। শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যানসার হচ্ছে। এমনকি শিশুর জন্মের সময় জিহ্বায় ক্যানসার পেয়েছি। সে ক্ষেত্রে এই রোগটাকে জেনেটিক ফ্যাক্টর বলা যায়। এখানে রোগীদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ১৭টি বেডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ৪৫ রোগী ভর্তি আছে। যে জায়গা আছে তাতে ৫০ রোগীকে আমরা চিকিৎসা দিতে পারি। রোগীর চাপ অনুযায়ী আরও ৫০টি বেড পেলে শিশুদের চিকিৎসা ভালো হবে। কারণ এটা তো সাধারণ কোনও রোগ না, বিশেষায়িত শিশু রোগ।’

বিএসএমএমইউ’র শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল বলেন, ‘পাঁচজন শিক্ষক এবং একজন কনসালট্যান্ট ও মেডিক্যাল অফিসার নিয়ে আমরা এই বিভাগটি চালায়। এখানে মোট ৩১টি বেড আছে।’

রমেক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নুশরাত জাহান বলেন, ‘২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আমি এই হাসপাতালে যোগ দিই। তিন বছর পর ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের জন্য আটটি বেড নিয়ে ওয়ার্ড তৈরি করি। তবে, রোগীর চাপ আরও বেশি। অন্য ওয়ার্ডে রেখেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘কমপক্ষে ২০টি বেড নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারলে ভালো হয়। এছাড়া এখানে প্লাটিলেট আলাদা করার ব্যবস্থা নেই। প্লাটিলেট আলাদা করার জন্য ল্যাব দরকার।’

ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবু তৈয়ব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে শিশু ক্যানসার বিভাগে ১০টি বেড রয়েছে। তবে, অন্যান্য ওয়ার্ডেও ভর্তি করা হয়। এখানে একজন অধ্যাপক শেখ নূর জামান এবং সহযোগী অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।’

চমেক হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডের একটি অংশে ১৫টি বেড নিয়ে আমি চিকিৎসা করি। ২০১৩ সাল থেকে এটা চালু আছে। আমি একা শিশু বিভাগের চিকিৎসা চালাচ্ছি।’

চিকিৎসকরা বলেন, ‘শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি। সব রোগীকে ট্রিটমেন্ট করাতে পারলে ভালো হতো। অর্থের অভাবে সবাই পুরো চিকিৎসা নিতে পারে না। রক্ত পরীক্ষার ল্যাব নেই, প্রয়োজনীয় জনবল নেই। যার কারণে চিকিৎসা ব্যাহত হয়।’

ঢামেকের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার এক ছাত্র গবেষণা করেছে, এতে দেখেছি চিকিৎসা করতে গিয়ে সবচেয়ে বাধাগ্রস্ত হই ড্রপআউটয়ে। শিশুরা চিকিৎসার মাঝখান থেকে চলে যায়। আমরা চারটি সমস্যা বের করেছি- প্রথমত, অর্থনৈতিক (প্রচুর ওষুধ কিনতে হয়); দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব (শিশুর পাশে থাকার মানুষের স্বল্পতা); তৃতীয়ত, শিশুর বাবা-মায়ের বিশ্বাস, এটা ভালো হয় না (তারা তখন ফকিরের পরামর্শ নেয়) এবং চতুর্থত, ব্লাড এবং ব্লাড প্রোডাক্ট লাগে সেটার স্বল্পতা। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধের স্বল্পতার কারণে শিশুরা ক্যানসারের চিকিৎসা পায় না।’

চিকিৎসকদের অভিযোগ, মাত্র ২১ জন শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সারাদেশে আছেন। তারাও আবার সঠিক পদে নেই। অনেককেই মেডিক্যাল অফিসার করে রাখা হয়েছে। পদায়ন করা হয়নি। এক চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সবচেয়ে খারাপ দিকটাই হচ্ছে, এই খাতে চিকিৎসকদের কোনও ভূমিকা নেই। সঠিক বিশেষজ্ঞকে যদি সঠিক চিকিৎসা করার জায়গায় দিত, তাহলে ভালো হতো। দেখা যাচ্ছে, যিনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ তাকে হয়তো ভুরুঙ্গামারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে রেখে দিয়েছে। এতে করে তিনি সঠিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। যে জনবল আছে তাদের যদি সঠিক জায়গায় দেওয়া যেত, তাহলে তারা শিশু ক্যানসার রোগের সঠিক চিকিৎসা করতে পারতেন।’

 

/আইএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ