X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিঠি দিলে হাসপাতালে আগুন প্রতিরোধে তোড়জোড় বাড়ে

তাসকিনা ইয়াসমিন
০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:২৪আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৪০




সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে লাগা আগুনের ধোঁয়া

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় এবং বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের পর এ নিয়ে বেশ শোরগোল চলছে। এদিকে রাজধানীর ৯০ ভাগ ভবন আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল ভবনও রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারি চিঠি পেলেই কেবল হাসপাতালে অগ্নি প্রতিরোধের তোড়জোড় দেখা যায়, এর বাইরে হাসপাতালগুলোতে অগ্নি প্রতিরোধে গঠিত কমিটি বরাবর নীরবই থাকে। এ অভিযোগ খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতর গত বছর দেশের সব হাসপাতালে অগ্নিনিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আলাদা আলাদা তিনটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়। এরপর বেশকিছু হাসপাতালে এই কমিটি গঠন করা হয়। তবে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিঠি দিলে সবাই একটু সচেতন হয়, পরে আবার সব ঠান্ডা হয়ে যায়।’

এদিকে, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর ৪২২টি হাসপাতাল অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৩টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ২৪৯টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর মাত্র ১১টি হাসপাতালের অবস্থা ‘সন্তোষজনক’।

ফায়ার সার্ভিসের করা তালিকায় এই ‘সন্তোষজনক’ হাসপাতালের তালিকায় রয়েছে— ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ডেলটা হেলথ কেয়ার মিরপুর লিমিটেড, এপোলো হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালসহ ১১টি হাসপাতাল। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব হাসপাতালের কমিটি ঠিকভাবে কাজ করছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন লাগে

তবে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ হাসপাতালেই অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। হাসপাতালে আগুন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের জন্য কোনও প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না কর্মীরা। এছাড়া, নগরীর পুরনো হাসপাতালগুলোতে নেই কোনও ফায়ার হাইড্রেন্ট, স্মোক ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম। বহুতল ভবন থেকে রোগী নিয়ে নিচে নামার জন্য শুধু ঢাকা মেডিক্যাল ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ভবনে র‌্যাম্প রয়েছে। তবে রাজধানীর বেশিরভাগ হাসপাতালে এই র‌্যাম্প ও ইমার্জেন্সি এক্সিট (সিঁড়ির) ব্যবস্থা নেই।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, আগুন লাগলেও এই হাসপাতালে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। কারণ, ঢামেক হাসপাতালে ‘ক্রস ভেন্টিলেশন’ অনেক বেশি। এক্সিট পয়েন্টও অনেক বেশি। সেখানকার জানালাগুলোও অনেক বড়। শুধু যে রুমগুলো শীতাতপ করা আছে সেগুলো, কিংবা যেগুলোতে অতিরিক্ত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন রয়েছে, ফলস সিলিং লাগানো হয়েছে সেগুলো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
হাসপাতালে অগ্নি প্রতিরোধ কমিটি প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) পরিচালক ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ভিজিলেন্স টিম আছে। সবকিছু তদারকির জন্য তিনটি কমিটি করা হয়েছে। তারা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন। প্রতিটি কমিটিতে সাতজন করে সদস্য আছেন। তারা পুরো হাসপাতালের ত্রুটি থেকে শুরু করে ফায়ার কার্যক্রম দেখাশোনা করেন। আমরা সপ্তাহে একদিন ফায়ার ফাইটিং প্র্যাকটিস করি। আমাদের যন্ত্রপাতি যা আছে— এগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহারে কর্মীদের নিয়ে ফায়ার ড্রিল করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের বিদ্যুৎ লাইনে এবং ট্রান্সফরমার থেকে বিভিন্ন সময় আগুন লাগে। একদিন ঠিক করা হলে আবার পরদিনই লাইনে বা ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দেয়। অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে এসবের স্থায়ী সমাধান দরকার।’

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

বারডেম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জোনারেল (অব.) শহীদুল হক মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালককে প্রধান করে ১৬ সদস্যের কমিটি হয়েছে। আমরা নিয়মিত মিটিংয়ে বসি। এছাড়া, নিয়মিত বিষয়গুলো মনিটরিং করা হয়। আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ইউনিট খোলামেলা, তাই আমরা মনে করছি— আগুন লাগলে এখানে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। এছাড়া, এখানে প্রতিটি ফ্লোরে হাইড্রেন্ট আছে। আমাদের এখানে প্রতি তিন মাস পরপর মহড়া হয়। এই মহড়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও উপস্থিত থাকেন।’

ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছরই আমরা ফায়ার সার্ভিস থেকে লোক এনে ৪৪ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো প্রতিটি ফ্লোরে সেট করেছি। এছাড়া, ১৬তলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত সিঁড়িগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। আটটি ফ্লোরে পানির পাইপ লাইন রেডি আছে। আগুন লাগলে এখান থেকেই পানি নিতে হবে। এগুলো সবই হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরামর্শক্রমে।’

হাসপাতালগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই আমরা হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিই। তখন তারা কমিটি গঠন করে মহড়া দেয়, পরে আবার ভুলে যায়— সমস্যাটা এখানেই। এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আগামী ২ মে থেকে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ শুরু হবে। এ সময় একদিন আমরা অগ্নিনির্বাপণের মহড়া করব এবং এটি নিয়মিত করার চেষ্টা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি হাসপাতালেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে। তবে পুরনো হাসপাতালগুলো অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে তৈরি হয়নি। এ কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যব্ক্ষেণ ও জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/টিটি/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা