চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাতকার (মৌখিক পরীক্ষা) বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা চেয়ে প্রার্থী মো. এমদাদুলক হকের আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চবি'র উপাচার্যকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আদালত। পাশাপাশি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট।
এমদাদুল হকের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
পরে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদের বিপরীতে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এমদাদুল হক ওই পদের একজন আবেদকারী।’
তিনি জানান, গত ২৭ মার্চ প্রাণীবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মো. এমদাদুল হক ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এরপর প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী তার পথ আটকান এবং তাকে অবরোধ করে সেখান থেকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কোনায় নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করা হয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার প্যাগোডায় নিয়ে এমদাদুলকে মারধর করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে নিয়ে গিয়েও তাকে মারধর করে ওই শিক্ষার্থীরা। এরপর তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বলা হয়— এমদাদুল শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’
পরে পুলিশ এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু প্রক্টর ও ভিসি এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেননি। ফলে এমদাদুলের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ তাকে হাটহাজারী থানায় লকাপে রেখে দেয়। এরপর ওসি এসে পুরো ঘটনাটি শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। মারধর করে এমদাদুলের গায়ের কাপড় ছিড়ে ফেলা হয়েছিল। এ কারণে থানার ডিউটি অফিসার নিজের একটি শার্ট এমদাদুলকে দেন। ওইদিন বিকাল পাঁচটার দিকে ছাড়া পেয়ে এমদাদুল হক তার এক বন্ধুর বাসায় চলে যান।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, দুদিন পর ৩০ মার্চ এমদাদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং অনুরোধ করেন, যেন তাকে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এমদাদুল হক ২০১২-১৩ সালে প্রাণীবিদ্যা বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪.৮৮ পেয়েছেন। তার এই ফলাফলের জন্য তিনি ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক দেন। এমন ভালো ফলাফল করার পরও একজন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না পান, তাহলে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ ঘটনার কোনও সমাধান না পেয়ে এমদাদুল হক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন। আদেশে বলা হয় ‘এমদাদুল হক গত ৩০ মার্চ ভিসি মহোদয়ের কাছে যে আবেদন করেছিলেন, সেটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই প্রাণীবিদ্যা বিভাগে প্রভাষকের দুটো খালি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করার ওপরও নিষেধাজ্ঞার জারি করেছেন আদালত।