X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমিনবাজারে ৬ ছাত্র হত্যা: ৮ বছরেও বিচার পাননি স্বজনরা

তোফায়েল হোছাইন
২২ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:২৫আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:২৭

আমিনবাজারে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ছয় ছাত্রকে

সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে প্রতিবছর শবে বরাত এলেই নিহত ছয় ছাত্রের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে ডাকাত সন্দেহে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল গ্রামবাসী। ওই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে সাভার থানা পুলিশ। আট বছরেও মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলায় আদৌ সুবিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজনরা।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কার্যক্রম শেষ হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ঘুরতে যান সাত বন্ধু। ওই সময় ডাকাত সন্দেহে তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। অন্যদিকে, পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীদের আসামি করে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

নিহতরা ছাত্ররা হলেন— ধানমন্ডি  ম্যাপললিপের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাংলা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব এবং বাংলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত। ওই ঘটনায় নিহতদের বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত  হলেও বেঁচে যান।

এরপর ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি তদন্ত শেষে র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে  অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে। পরবর্তীতে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে গ্রামে ডাকাত আসার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং থানায় ডাকাতির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, গ্রামবাসী বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ছয় ছাত্রকে হত্যা করে।

এরপর ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ৬০ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় মোট ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ১১ অক্টোবর সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য আছে। মামলায় মোট আসামি ৬০ জন, এর মধ্যে ৯ জন পলাতক, এক জন মারা গেছে, ৫০ জন জামিনে আছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্র পক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে আছে। মামলার বাদী, নিহতদের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, আসামিদের স্বীকারোক্তি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও নিহতদের বাবা-মার সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে।’ চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আরেক কৌঁসুলি শাকিলা জিয়াছমিন (মিতু) বলেন, ‘সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলার বিচার কাজ বিলম্ব হচ্ছে। মামলাটিতে বেশির ভাগ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুই-একজনের সাক্ষ্য এখনও বাকি আছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন সময় ধরে সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়েই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ এ মামলায় ঠিকমতো্ সহায়তা করছে না। তারা এ মামলাটি ভিন্নখাতে অর্থাৎ ডাকাতি মামলা সাজাতে চেয়েছিল। এজন্য সাক্ষীদের আনতেও তাদের  আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আশা করেছিলাম, মামলাটির কার্যক্রম এই শবে বরাতের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু তা হলো না। আশা করছি, খুবই দ্রুত মামলার বিচার শেষ হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া