বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেকারত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। তবে ডিজিটাল অর্থনীতি বেকারত্ব কমাতে সহায়ক। প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এর মাধ্যমে উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। সম্প্রতি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স (ডিএসসিই) আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এর শিরোনাম ছিল ‘ডিজিটাল ইকোনমি ফোর্থ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন অ্যান্ড বিগ ডাটা: ইমপ্যাক্ট অন বাংলাদেশ ইকোনমি’।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএসসিই গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি এগিয়ে চলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অর্থনীতিতে উন্নয়ন আসছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের পাশাপাশি এর চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রাখা দরকার। সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে অনেক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে বেকারত্ব বাড়তে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে।’
মানুষের উন্নয়নকে সামনে রেখে যেকোনও উন্নয়ন নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন ড. কাজী খলীকুজ্জমান। তার কথায়, ‘১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ। এই বৈষম্য কমানো জরুরি। প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির কারণে যেন কেউ কাজ হারিয়ে বেকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসসিই’র উদ্যোক্তা অর্থনীতি কোর্সের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির ওপর ভর করে আরেকটি শিল্প বিপ্লব হতে চলেছে। এর থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে রূপরেখা অনুযায়ী উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ডিজিটাল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, আয় বৃদ্ধি, দরিদ্র ও বৈষম্য কমাতে হবে। এর যুগোপযোগী উপায় হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতি।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী মনে করেন, অর্থনীতির সঙ্গে ডাটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তার মন্তব্য, ‘বিশাল ডাটাভান্ডার যেকোনও সিদ্ধান্ত অনেক দ্রুত ও নির্ভুলভাবে নিতে সহায়তা করে। অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডিজিটল অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ডাটার নিরাপত্তা। সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হতে হবে। নারীরা ডিজিটাল ইকোনমিতে কম সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর কাঠামো তৈরির বিকল্প নেই। এতে মানুষের সক্ষমতা বাড়ে, ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু উল্লেখ করেন, একসময় রেমিটেন্স আসতে অনেক সময় লাগতো ও তা অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। তার মন্তব্য, ‘ব্যাংকগুলোর রেমিটেন্স আনার প্রক্রিয়া ডিজিটাল করায় তা বন্ধ হয়েছে। সরকার বড় ধরনের ডাটাবেজ ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছে। এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘চতুর্থ অর্থনৈতিক বিপ্লব প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে ফোরজির পর ফাইভজি চালুর প্রক্রিয়াও চলছে। বাংলাদেশের অনেক ক্যাপাসিটি আছে, সেগুলো যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।’
আনোয়ার-উল আলম পারভেজের মন্তব্য, ‘নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, আবার তা হারিয়েও যাচ্ছে। উন্নয়নের আগে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে সেই তথ্য আগে সংগ্রহ করতে হবে। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কাজের সুযোগ কম হওয়ায় আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়ছে। এসবের জন্য ডিজিটাল অর্থনীতির ধারা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রির রেভোল্যুশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ তামজিদ উর রহমান, বলেন, ‘ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য সরকারের পলিসি নেই। প্রযুক্তিনির্ভর সেবাগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে ও কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেই নীতি প্রণয়ন করা জরুরি। চ্যালেঞ্জ থাকলেও ডিজিটাল অর্থনীতিকে গ্রহণ করে প্রতিযোগী সক্ষম হয়ে উঠতে হবে।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম, ডিএসসিই সহকারী অধ্যাপক রেহেনা পারভীন প্রমুখ।
