X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরও দুজন চিকিৎসক পেলো নড়াইল সদর হাসপাতাল, বরখাস্তদের ফেরাতে অনুরোধ মাশরাফির

তাসকিনা ইয়াসমিন
৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৪৮আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ২০:০৪

সদর হাসপাতাল, নড়াইল

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা অভিযানের পর আরও দুজন চিকিৎসক পেয়েছে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল। আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুজন চিকিৎসককে সেখানে বদলি করেছে। এ নিয়ে চিকিৎসক সংখ্যা দাঁড়ালো এগারো জন। সেখানে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৯টি। বাকি পদগুলো খালি রয়েছে। এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার পরিদর্শনের পর পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে যে চার জন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন মাশরাফি-ই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

নতুন যে দুজন চিকিৎসক সেখানে যোগদান করছেন তারা হলেন-যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডা. আহাদ আলী মহলদার এবং যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ওএসডি জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. মোশফেক উর রহমান।

এর আগে ওই হাসপাতালের চারজন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই চিকিৎসকরা হচ্ছেন কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. শওকত আলী, কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. রবিউল আলম, সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আখতার হোসেন ও মেডিক্যাল অফিসার ডা. এ এস এম সায়েম।

এই চার চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্তের আদেশে স্বাক্ষর করেন সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। সেই আদেশে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে বলা হয়, ‘যেহেতু আপনি প্রায়শই কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকেন মর্মে অভিযোগ উপস্থাপিত হয়েছে; যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি-২(খ) মোতাবেক অসদাচরণের শামিল এবং যেহেতু আপনাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে রাখা হলে অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে ও অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে; সেহেতু আপনাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি-১২(১) মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৯ এপ্রিল যে চারজন চিকিৎসককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের সাময়িক স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র জানায়, মাশরাফি চিকিৎসকদের সাময়িক বরখাস্তের বিপক্ষে। তিনি বিষয়টি জানতে পারার পর উচ্চপর্যায়ে ফোন করে বিয়ষটি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন এমনিতেই চিকিৎসক নেই সেখানে চারজনকে ওএসডি করলে চিকিৎসা সংকট আরও বাড়বে।

তবে মাশরাফি গণমাধ্যমের সামনে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।   

নড়াইলের সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পান স্থানীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা

এ প্রসঙ্গে নড়াইল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী বলেন, আমার এখানে মোট পদ রয়েছে ৩৯ টি। নতুন দুজনকে নিয়োগ দেওয়ায় এ সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ জনে। চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে আমার চিকিৎসক সংখ্যা আরও কমে যাবে। তবে, তাদের সাময়িক বরখাস্তের চিঠি হাতে পেয়েছি কিন্তু এখনও তাদের এই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পাইনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, হাসপাতালের কর্মরতদের সময় দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরপর জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিকেল চারটায় জরুরি বিভাগে সব চিকিৎসক উপস্থিত থাকবে না। হাসপাতালের নয়টি ওয়ার্ডে প্রতি আট ঘণ্টায় দুইজন করে মোট ৭৩ জন নার্স দায়িত্ব পালন করেন। মাশরাফি একটি ওয়ার্ডে গিয়ে দুইজন নার্সকে পান। তিনি সমস্ত হাসপাতালের নার্সের কথা বলেননি। তাই বিষয়টি জনগণের ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে কর্মরত ১৫ চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র একজনকে কর্মস্থলে পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া ৭৩ জন নার্সের মধ্যে মাত্র দুইজনকে কর্মস্থলে পেয়ে তার এ বিস্ময় ক্ষোভে রূপ নেয়।

গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুই দিনের সফরে নড়াইলে আসেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন তিনি। এরপর বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় চিকিৎসক ডা. আকরাম হোসেনের (সিনিয়র কনসালট্যান্ট) ৩ দিনের অনুপস্থিতি দেখে তার ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন, ছুটি নেওয়া ছাড়াই ওই ডাক্তার তিন দিন ধরে অনুপস্থিত।

রোগীরা জানান, মাশরাফির হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বাবু ও ডা. আলিমুজ্জামান সেতু হাসপাতালে ছুটে আসেন।

এরপর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সাকুরকে তার কার্যালয়ে বসে ফোন করেন মাশরাফি। আব্দুস সাকুর জানান, খুলনায় একটি সভায় অংশগ্রহণ শেষে তিনি মাগুরায় বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। স্টেশনে নেমে শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাতের মধ্যেই আব্দুস সাকুরকে হাসপাতালে চলে আসতে বলেন মাশরাফি। তখন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সাকুর এক ঘণ্টার মধ্যেই সদর হাসপাতালে চলে আসেন। এসময় মাশরাফি হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেন।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা