X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌন নিপীড়ন: রেহাই পাচ্ছে না ছেলেশিশুও

উদিসা ইসলাম
২৬ মে ২০১৯, ১০:০০আপডেট : ২৭ মে ২০১৯, ০৯:৪৪

যৌন নিপীড়নের শিকার ছেলেশিশুরাও

বাংলাদেশে প্রতি চারটি মেয়েশিশুর একটি এবং প্রতি ছয়টির মধ্যে একটি ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মেয়েশিশুর মতো ছেলেশিশুও যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও তা সামনে আনা হয় না। বিষয়টি আড়াল করার এ প্রবণতার কারণে বলাৎকার হওয়া ছেলেশিশুর সঠিক সংখ্যাও জানা যায় না।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছেলেশিশু মানেই তারা নিরাপদ এবং নারী তত্ত্বাবধায়ককে তুলনামূলক নিরাপদ ভেবে নেওয়া হয়। তবে পর্যবেক্ষণ বলছে, মেয়ে ও ছেলে—উভয় শিশুর যৌন নিপীড়নের জন্য কাছের আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি তাদের নারী তত্ত্বাবধায়করাও দায়ী।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শিশুকে নিরাপদ রাখতে অনেক সময় অভিভাবকরা তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। এতে তার সামাজিকায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বরং যৌন নিপীড়নের শিকার শিশু অনেক সময় অস্বাভাবিক আচরণ করে, কিংবা নানা সংকেত দেওয়ার চেষ্টা করে—সেগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। একইসঙ্গে বয়স অনুযায়ী শিশুকে বিজ্ঞানভিত্তিক যৌনশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব জরিপ বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১০টি ছেলেশিশু বলাৎকারের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। ২০১৮ সালে বলাৎকারের শিকার ছেলেশিশুর সংখ্যা ছিল ১৩। জরিপের ফলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বলাৎকারের শিকার হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী শিশুরা। ২০১৯ সালে শিশু ধর্ষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রথম সাড়ে চার মাসেই ২০১৮ সালের পুরো বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ছিল ২৮৯টি, অথচ এ বছরের ১৫ মে পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৬টি ।

শিশুরা পারিবারিক আবহের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় মন্তব্য করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রির সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতি ৪টি মেয়েশিশুর মধ্যে একটি এবং প্রতি ছয়টি ছেলেশিশুর মধ্যে একটি যৌন হয়রানির শিকার হয়৷ সংখ্যাটি মোটেই কম না।’ তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের দ্বারা।’

ডা. হেলাল বলেন, ‘সাধারণ বিবেচনায় ধরা হয়, ছেলেশিশুর কোনও ধরনের যৌন হয়রানি ঘটার আশঙ্কা নেই। বিষয়টি মোটেই সেরকম নয়। ছেলে-মেয়ে নির্বিচারে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ভিকটিম শিশু নানারকম সংকেত দিয়ে পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করে। সেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।’ নারী তত্ত্বাবধায়কের কাছে শিশুরা তুলনামূলক নিরাপদ বলে একধরনের ভ্রান্ত ধারণা আছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে নারীদের কাছেও শিশুরা নিরাপদ নয়।’

করণীয় জানতে চাইলে ডা. হেলাল বলেন, ‘বয়স বিবেচনায় রেখে শিশুদের বিজ্ঞানভিত্তিক যৌনশিক্ষা দিতে হবে। মনে রাখা জরুরি শিশু যদি যথাযথ যৌনশিক্ষা পায় তাহলে সে নিপীড়ক হয়ে উঠবে না।’

সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্নেন্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টরের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ও অপব্যবহারের ফলে যৌনতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধও যথাযথভাবে চর্চা করা হচ্ছে না। ফলে যৌন চাহিদা নিবারণে ধর্ষক অধিকাংশ সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও প্রতিরোধে অক্ষম কাউকে বেছে নেয়, যার শিকার হচ্ছে শিশুরা।’

তিনি বলেন, ‘ছেলেরা যে যৌন নির্যাতন ও বলাৎকারের শিকার হতে পারে, এ ধারণাটি আমাদের শিশু সুরক্ষা বলয়ে গুরুত্বের সঙ্গে অনেক সময় আলোচিত হয় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে,  যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি ছেলেশিশুর জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।’ কাজেই পরিবারে শিশুদের এই বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি কোনও আবাসিক কর্মস্থল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে অন্যদের থাকার ব্যবস্থা বন্ধ করা উচিত বলে মত দেন তিনি। তার মতে, ছেলেশিশুদের ওপরে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে নীরবতা ভেঙে সবাইকে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে এগিয়ে আসতে হবে।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার মনে করেন, অন্যদের সঙ্গে খেলাধুলা, শিশুর স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করলে অনেক সময় তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন নিয়ন্ত্রণের কারণে শিশুর সামাজিক দক্ষতা কমে যায়। আর সামাজিক দক্ষতা কমে গেলে সে নিপীড়নের পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারবে না। কেবল নির্দিষ্ট মানুষের কোলে কোলে সে বড় হলে সামাজিক দক্ষতার জায়গাগুলো সংকুচিত হয়। সে প্রতিরোধ করতে না পেরে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে উল্টো ভয় পাবে।

তিনি বলেন, ‘শিশুর চলাফেরার ওপর কৌশলে নজরদারি করতে হবে অভিভাবককে। সবচেয়ে জরুরি হলো— শিশুকে স্পর্শের রকমফের শেখানো এবং যে স্পর্শে সে অস্বস্তি বোধ করবে, সেটা প্রতিরোধ করে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে, সেটি শেখাতে হবে।’

আরও পড়ুন:

ধর্ষণ: বেশি শিকার শিশুরা

 

/এইচআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শুটিংয়ের অন্তরালে...
শুটিংয়ের অন্তরালে...
সোনার দাম কমলো
সোনার দাম কমলো
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা
পর্যটনে সহযোগিতা করতে আগ্রহী আরব আমিরাত
পর্যটনে সহযোগিতা করতে আগ্রহী আরব আমিরাত
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের