সংবাদপত্রের নবম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। গত ১৩ জুন প্রকাশিত ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ কতটা বাস্তব?’ শীর্ষক নোয়াবের বিবৃতি সাংবাদিক সমাজকে দারুণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করে সাংবাদিকদের এই সংগঠন দুটি।
শনিবার (১৫ জুন) বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
নোয়াবের বিবৃতি গণমাধ্যমের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ‘সহকর্মী ও সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিকপক্ষের এ ধরনের ধারণা পোষণ করে দেওয়া বিবৃতি বিএফইউজে ও ডিইউজের কাছে অগ্রহণযোগ্য, অবাস্তব এবং প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার অপপ্রয়াস ও নৈতিকতা বিবর্জিত বলে বিবেচিত হয়েছে। মালিকপক্ষের প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করে সব সময় কাজ করে থাকেন সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেখানে নবম মজুরি বোর্ড ঘোষণার চূড়ান্ত সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রুটি-রুজি ও মর্যাদার জায়গাটিকে মালিকপক্ষ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নতুন সঙ্কট তৈরি করবে। মালিকের সঙ্গে শ্রমিকের তথা গণমাধ্যমকর্মীদের দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। যার প্রভাব পুরো শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর নোয়াবের সদস্যরা শিল্প মালিক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
গণমাধ্যমকর্মী আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের চাকরির ধরন একরকম নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীরা তা পান না। এমনকি সংবাদপত্রের জন্য নির্ধারিত ছুটির দিনেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিনিময়ে প্রাপ্য তেমন নেই বললেই চলে। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের সমস্যা-সঙ্কটে ন্যায্য পাওনাটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অসংখ্য সংবাদপত্রে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রম আইন ও মজুরি বোর্ড অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।’
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, ‘একজন সাংবাদিককে নানাভাবে প্রশিক্ষিত এবং বহুমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা অন্য কোনও শিল্প ও পেশার মতো নয়। সেটা মালিকরা নিজেরাও জানেন। যেকোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগণ হয় তার অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। এর দায়-দায়িত্ব সরকার বা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীর নয়, পরিচালকদের ওপরই বর্তায়। সেটি আমলে না নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলা গর্হিত কাজ। মনে রাখতে হবে, সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা বিপণনকর্মী নন। সুতরাং কোনও প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের কোনও সম্পর্ক নেই।’
নেতারা গণমাধ্যমকর্মীদের ছাঁটাই করা প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,‘সংবাদপত্র শিল্পের উৎকর্ষ এবং সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ কল্যাণে নোয়াব বা মালিকপক্ষ সরকারের কাছ থেকে আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে বিএফইউজে ও ডিইউজের কোনও আপত্তি নেই। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষণার সূত্র ধরে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হলে বা তাদের ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হলে, অবশ্যই তা মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।’
