X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

মেয়র সিদ্ধান্ত দিলেও উচ্ছেদ হয় না ডিএসসিসি’র অবৈধ স্থাপনা

শাহেদ শফিক
২৬ জুন ২০১৯, ১০:১৫আপডেট : ২৬ জুন ২০১৯, ১৫:২৫

ডিএসসিসি

মেয়র সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন দেওয়ার পরও উচ্ছেদ হয় না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার অবৈধ স্থাপনা। অভিযোগ রয়েছে, সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক লেনদেনের কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ডিএসসিসি বরাবর অভিযোগ জানালেও কোনও কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে নগরবাসীসহ ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাগরিকদের বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ডিএসসিসির মেয়রের দফতর থেকে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, যা সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ হয়ে মেয়রের অনুমোদন পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু মেয়র অনুমোদন দিলেও পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় কর্মকর্তারা তা পালন করেন না। অভিযোগ রয়েছে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দখলদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে উচ্ছেদ কাজে বিরত থাকেন।

জানা গেছে, কাপ্তান বাজার ভবন-১ ও রোড সাইড মার্কেটের মাঝখানের খালি জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত খাবার হোটেল ও কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স মার্কেট-১ এবং ২ নম্বর ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার ১৪৯টি দোকান অবৈধ দখল হয়ে আছে। ছয় মাস আগে দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য মেয়রের দফতর থেকে নথি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও অভিযান চালাননি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির মালিকানাধীন বিভিন্ন মার্কেট দখল করে অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এছাড়া, বেশ কয়েকটি জমি দখল করে প্রভাবশালীরা দোকানপাট তৈরি করেছে। ফুটপাতও বেদখল হয়ে গেছে। সংস্থার সম্পত্তি বিভাগ থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ডিএসসিসিতে বর্তমানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তাছাড়া সংস্থার পাঁচটি অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ৬৯টি নথিতে মেয়রের অনুমোদন থাকলেও সম্পত্তি বিভাগ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে না। 

তালিকাভুক্ত এই অবৈধ স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—গুলিস্তান শহীদ মতিউর পার্কের ভেতরে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ও ভাসমান হকারদের মালামাল। ডিএসসিসির মালিকানাধীন রাস্তার ওপরে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন সেমিপাকা স্থাপনা। ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, ব্লক বি এর ষষ্ঠ তলা থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ। ইসলামবাগ স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে বর্জ্যবাহী কন্টেইনারের আশপাশের অবৈধ দোকানপাট। পুরনো এলিফ্যান্ট রোডে (সবজি বাগান)  বিদ্যমান অবৈধ নার্সারি ও ভাসমান টং দোকান। অঞ্চল-৩ এর আওতাধীন জালাল সরদার কমিউনিটি সেন্টারের ষষ্ঠ তলায় স্থানীয় একটি ক্লাবের অবৈধ ব্যবহার। নির্মাণাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ বক্স ও এর আশপাশের অবৈধ জুতার দোকান। অঞ্চল-১ এর আওতাধীন লাল ফকিরের মাজারের গলির (বশির উদ্দিন রোড) অবৈধ কাঁচাবাজার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের রোড সাইড মার্কেটে পুনর্বাসনে বরাদ্দপ্রাপ্ত ৪৯ ও ৫০ নম্বর দোকানের মাঝখানের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে মূল মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া। একই মার্কেটের ২১ ও ২২ নম্বর দোকানের মধ্যবর্তী স্থানের অবৈধ স্থাপনা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন ডিএসসিসির রোড সাইড মার্কেটের ওপরে অবৈধভাবে নির্মিত অফিস কক্ষ ও সিঁড়ি সিলগালা করে দেওয়া। সূত্রাপুর বাজারে অবৈধভাবে নির্মিত দোকান ও ওই দোকানের ওপর নির্মিত বসতি ঘর। শিল্পকলা একাডেমির আশপাশের রাস্তার ওপরের কাঁচাবাজার। জিরো পয়েন্ট থেকে শিক্ষাভবন পর্যন্ত সড়কের হকার উচ্ছেদ। পল্টন ইন্টার সেকশনে নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মাণের জন্য পুরনো যাত্রী ছাউনি উচ্ছেদ। আনন্দবাজার এসটিএস সংলগ্ন এলাকা হতে ঘোড়ার গাড়ি উচ্ছেদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মেয়রের নির্দেশের পর একটি অভিযান চালানো হয়েছে। জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। মেয়রের দফতর সেটি এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেয়। এরপর স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা বারবার ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কিন্তু উচ্ছেদ করা হয়নি। সর্বশেষ গত ১৬ জুন মেয়রের নির্দেশে এই কাঁচাবাজারের অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়।

সম্পত্তি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হলেই তিনি অজ্ঞাত কারণে অভিযান বন্ধ রাখেন। এ কারণে এই কর্মকর্তার সময়ে ডিএসসিসিতে উল্লেখযোগ্য কোনও অভিযান হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার (২৪ জুন) আমি ডিএসসিসি থেকে বদলি হয়ে চলে এসেছি। এটি নিয়ে নতুন যিনি আসবেন, তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে নতুন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা এখনও যোগদান করেননি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত দিয়ে দিই। এরপর সংশ্লিষ্টরা অভিযানে যান। কিন্তু এতগুলো সিদ্ধান্ত এখনও অবাস্তবায়িত থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে কমিটি করে দেবো, কেন উচ্ছেদগুলো করা হয়নি।

 

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ
ভাটারায় ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা- মাসহ আরও তিনজন দগ্ধ
ভাটারায় ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা- মাসহ আরও তিনজন দগ্ধ
সর্বাধিক পঠিত
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল