জরুরি কল সেবা দিতে হেল্পলাইন ৯৯৯ গত ১৮ মাসে সবচেয়ে সফলতা দেখিয়েছে বাল্যবিবাহ ঠেকানোয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক কল এলেও সবকটিতে উদ্যোগ নেওয়া নানা কারণেই সম্ভব হয় না। তবে রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি আসে দাম্পত্যকলহের অভিযোগ। একইসঙ্গে পারিবারিক সহিংসতায় সহায়তা চেয়ে কলের পরিমাণও কম নয়। যদিও সমাজ গবেষক ও মানবাধিকারকর্মীদের ধারণা, সেবাগ্রহণের পদ্ধতির কারণে এখনও কল করার ক্ষেত্রে ভিকটিমদের দ্বিধা কাজ করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি নিয়ে যথাযথ প্রচারণা না থাকাতেও খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি ৯৯৯ সেবা। তারা বলছেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে দরকারি প্রশিক্ষণ, মানবিকতা, যথাযথ শিক্ষা ও লজিস্টিক সহায়তা−এসবের সমন্বয় ছাড়া সেবা নিশ্চিত হবে না।
নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে হেল্প ডেস্ক ৯৯৯। নারীর আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে কেউ গাছ কেটে নিয়ে গেছে কিংবা শব্দ দূষণের শিকার কিংবা বিড়াল উদ্ধারে ৯৯৯-এর ভূমিকার বিষয়টি বারবার সামনে এলেও দেড় বছরের মাথায় এসে প্রশ্ন উঠছে এর কার্যকারিতা নিয়ে। সমালোচকরা বলছেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা যায়−এই বোধ তৈরি করতে না পারলে আগামীতে এর জনপ্রিয়তা বাড়বে না।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত যেসব বিষয়ে নারী বা তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে তার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে জানা গেছে, তারা বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে ১৪৮০টি, নারী পাচারের বিষয়ে ১৫টি, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ৬১৫টি, নারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ৫৭৭টি এবং গৃহনির্যাতনের শিকারের বিষয়ে ৭৭৮টি ফোনের অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছেন।
৯৯৯-এর প্রতি মানুষের আস্থার অভাব আছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আস্থার জায়গায় যাওয়ার জন্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পরিমাণ কারিগরি সহায়তা এবং পেশাগত দক্ষতা ও সেবা প্রদানের আন্তরিকতা থাকতে হয়, তার সবকিছুরই অভাব রয়েছে। অন্যদিকে ভিকটিমরা যেখানে থানায় সরাসরি গিয়ে সেবার নিশ্চয়তা পায় না, সেখানে টেলিফোনে সেবা পাবে, এটা বিশ্বাস করানো বড় চ্যালেঞ্জ। করণীয় কী, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন−পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখা এবং অভিযোগকে মিটমাট করে দেওয়ার চেয়ে বিষয়গুলো যেন আইনিভাবে মীমাংসা হয়, সেদিকে নজর দেওয়া। যে কোনও বিপদে এক জায়গায় কল দিয়ে মুহূর্তে সাহায্য পাওয়া যাবে, এটা নিশ্চিত জানা থাকলে এই সেবা জনপ্রিয় না হওয়ার কোনও কারণ নেই। এখন আমাদের দরকার যথাযথ প্রশিক্ষণ, মানবিক দৃষ্টিতে দেখা, এসবের সমন্বিত কার্যক্রম।
আমরাই পারি জোট (উই ক্যান)-এর নির্বাহী সমন্বয়ক জিনাত আরা হক নিজে ভুক্তভোগী উল্লেখ করে বলেন, অভিযোগ করার পর তারা থানায় অবহিত করেন এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি বিষয়টি নজরে নেওয়া দরকার মনে করেন, তখনই কেবল সিরিয়াসলি দেখা হয়। গলদটা এইখানেই। ‘ওসি যদি চান’ তবে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাবেন, এই অংশটি না থাকলে আরও কার্যকর হতো বিষয়টা। বেশিরভাগ অভিযোগের ক্ষেত্রে ওসি ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে গিয়ে ৯৯৯-এর কাছে পাল্টা ভুল বার্তা দিয়ে থাকে। জিনাত আরা হক বলেন, বাল্যবিয়ে থেকে শুরু করে সবক’টি ইস্যুতে পুলিশি অ্যাকশনের পর অবশ্যই সেটির ফলোআপ করা দরকার। কেননা আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, কোনও বাল্যবিবাহ শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যায় না।
জাতীয় জরুরি এই সেবা কেমন চলছে প্রশ্নে বিভাগের পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই সময়ে এতোগুলো বাল্যবিবাহের ঘটনা সফলতার সঙ্গে ঠেকানো গেছে, এটি ইতিবাচক। তবে শহরের নারীরা যতটুকু জানে গ্রামীণ নারীরা একেবারেই এই সুবিধা বিষয়ে জানে না। নারী শিশু যেকোনও প্রান্তে থাকুক না কেন, তাদের কাছে একটি মোবাইল থাকলে ফোন করে এই সুবিধাটা নিতে পারে। নারীর চেয়ে বিপদে পড়া পুরুষরা সুবিধাটি বেশি নিতে পারছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি, যতটুকু জানে সেটি গণমাধ্যম থেকেই জানে। সারাদেশ থেকে পারিবারিক নির্যাতনের ফোন বেশি আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশ থেকেই নারীরা এখনও এই সুবিধা গ্রহণে পিছিয়ে আছে।