X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
তিন সড়কে রিকশা বন্ধ

গতি বেড়েছে যানবাহনে, ভোগান্তিও আছে

শাহেদ শফিক
০৮ জুলাই ২০১৯, ২০:১৫আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৬:৩৫

বাড্ডার ইউলুপ সংলগ্ন সড়কে রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়নি রাজধানীর তিনটি রুটে রিকশা চলাচল বন্ধ করায় সড়কগুলোতে যানবাহনের গতি কিছুটা বেড়েছে। ফলে কমেছে যানজট। তবে রিকশা বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতেও পড়েছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। রিকশা বন্ধের দ্বিতীয় দিনে সড়কগুলো ঘুরে করে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সোমবার (৮ জুলাই) সকালে কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ রুটে দেখা গেছে, সড়কটিতে রিকশা নেই বললেই চলে। যানবাহনগুলো অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে চলছে। তবে মাঝে মধ্যে দুই-একটি রিকশা দেখা গেছে। সড়কের প্রতিটি সংযোগ মোড়ে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। তারা কোনও রিকশা প্রধান সড়কটিতে ঢুকতে দিচ্ছেন না। 

আবুল হোটেল মোডে দায়িত্বরত আউয়াল নামে ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য দিন এই সময়ে এই সড়কে অনেক যানজট থাকে। গত দুই দিন অনেক কমেছে। কারণ রাস্তায় রিকশা নেই। পরিবহনগুলো যাত্রী উঠিয়ে দ্রুত চলে যেতে পারছে। রিকশা ধীরগতির যানবাহন হওয়ায় পেছনের পরিবহনটি চাইলেও সামনে যেতে পারে না। রাস্তা এখন অনেকটা যানজটমুক্ত।’

বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরা টেলিভিশন সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে, দ্রুতগতিতেই পরিবহনগুলো চলাচল করছে। পুরো সড়কের কোথাও ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়া যানজটে পড়তে হচ্ছে না। এতে পরিবহন চালকদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীরাও সন্তুষ্ট।

জানতে চাইলে রাইদা পরিবহনের চালক রাজিব হোসেন বলেন, ‘অন্যদিন এয়ারপোর্ট থেকে সায়েদাবাদ আসতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগতো। আজ এক ঘণ্টার কম সময়ে একটি ট্রিপ শেষ করতে পেরেছি। রিকশা বন্ধ হওয়ায় এখন যানজট অনেক কমেছে। এভাবে চললে আমরা বেশি ট্রিপ দিতে পারবো। যাত্রীও বেশি নিতে পারবো। ফলে মানুষের ভোগান্তিও হবে না, সময়ও নষ্ট হবে না।’

তবে সড়কে রিকশা না থাকায় কেউ কেউ দুর্ভোগেও পড়েছেন। সকালে দুই সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য হাজীপাড়ার বাসা থেকে বের হন জুম্মাতুল বিদা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ছেলে-মেয়েদের রিকশায় করে স্কুলে পৌঁছে দিই। কিন্তু আজ কোনও রিকশা স্কুলে যেতে রাজি হচ্ছে না। তারা বলছে, রাস্তায় নাকি রিকশা চলতে দেওয়া হয় না। এখন বাধ্য হয়েই সিএনজি নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। ৪০ টাকার ভাড়া দুইশ’ টাকা দিতে হচ্ছে।’

প্রায় একই অবস্থা দেখা গেছে গাবতলী থেকে আজিমপুর বা মিরপুর সড়কেও। এই সড়কটিতেও যানবাহনের গতি অনেক বেড়েছে। রিকশা না থাকায় যানবাহনগুলো দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে। রিকশার বিকল্প হিসেবে চক্রাকার বাসের যাত্রীও বেড়েছে। তবে সড়কটিতে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি দেখা গেছে।

আজিমপুরের বাসিন্দা ইব্রাহিক খালিদ বলেন, ‘রিকশার যন্ত্রণায় রাস্তাঘাটে হাঁটা যায় না। সরকার এই পরিবহনটি বন্ধ করেছে, ভালো হয়েছে। এখন সরকারের উচিত হবে পর্যাপ্ত সংখ্যক উন্নতমানের গণপরিবহন নিশ্চিত করা। তাহলেই রিকশা বন্ধ করার সুফল আসবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘রিকশা বন্ধ করার কারণে গতকাল এবং আজ পুরো সড়কটি ফাঁকা দেখা গেছে। গাড়ির গতি অনেক বেড়েছে। গতি বাড়লে গণপরিবহনগুলো বেশি ট্রিপ দিতে পারে। আর ট্রিপ বেশি হলে যাত্রীও বেশি নেওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্যবস্থাটি সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আমরা পরিবহন মালিক, রিকশা চালক ও রিকশা মালিকদের সঙ্গে বসেছি। তারা সবাই আমাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তারাও এতে সন্তুষ্ট। কেউ চায় না কোনও একটি পরিবহনের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ুক।’

রামপুরায় সড়কে যানজট কমেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘রিকশা সারা শহর থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়নি। মাত্র দু’টি রাস্তায় বন্ধ করা হয়েছে। ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি’র নির্মাণ কাজের কারণে ভিআইপি রোডে ঢাকার নর্থ-সাউথ কানেকশনটা স্লো হয়ে গেছে। জ্যাম লেগে যায়। আমরা এই যোগাযোগের গতিটা বাড়াতে মেইন সড়ক থেকে ধীরগতির যানবাহনগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। এর সুফলও আমরা পাচ্ছি। গত দুই দিনে সড়কে তেমন একটা যানজট দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘রিকশা যেভাবে চালানো হয়, এটা অমানবিক। আমরা দু’জন-তিনজন রিকশায় উঠি আর সেটা চালিয়ে নিয়ে যান একজন চালক। এভাবে চলতে পারে না। রিকশা চালকরা অন্য কাজ করতে পারেন। গ্রামে ধান কাটার মানুষ পাওয়া যায় না। আমাদের এক জায়গায় পড়ে থাকলে চলবে না। পৃথিবীর কোনও দেশের রাজধানীতে রিকশা চলে না। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা রিকশার একটা জায়গায় আটকে থাকতে পারবো না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ‘

প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই, দক্ষিণ নগর ভবনে এক সমন্বয় সভায় ঢাকা মহানগরীর অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে গঠিত কমিটির সভাপতি, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর তিনটি রুটে রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। রুটগুলো হচ্ছে— কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আসাদগেট-আজিমপুর ও সায়েন্সল্যাব-শাহবাগ।

 

 

আরও পড়ুন:

চক্রাকার বাস সার্ভিস: যেসব সড়কে রিকশা চলবে, যেসবে চলবে না

অল্প দূরত্বে হেঁটে চলুন, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে: সাঈদ খোকন

 

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা