বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপুর টাকায় বেনামে প্রতিষ্ঠিত চারটি কোম্পানির মনোনীত পাঁচ পরিচালকের কার্যক্রম তদন্ত করে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে তাদের কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কোম্পানির পরিচালক থেকে অপসারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মো. মনিরুজ্জামান নামের একজন শেয়ার হোল্ডারের রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট এম কে রহমান ও ব্যারিষ্টার এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান খান।
পরে সিদ্দিকুর রহমান খান জানান, এই আদেশের কারণে সংশ্লিষ্ট পাঁচ পরিচালকের ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নেওয়া উচিত হবে না।
যে চার কোম্পানির পরিচালকদের বিষয়ে অভিযোগ, সেগুলো হলো- আলফাবেট অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, অপারচর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, রাকাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও কাসরাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
এর আগে, গত ২ জুলাই মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কোম্পানির পরিচালক থেকে অপসারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আবেদন করেছিলেন ফার্ষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেননি।
‘তারেক ঘনিষ্ঠ অপুর দুর্নীতির আরো তথ্য’ শিরোনামে ২৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে একই ঘটনায় আরও দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৩৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার মিয়া নুরুদ্দিন অপুর দুর্নীতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে আরও নতুন তথ্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপুকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এসব তথ্য জানতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের জুন-জুলাই মাসে অপু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে তখনকার মালিকপক্ষ তাদের চারটি কোম্পানির নামে থাকা ২৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে আলফাবেট অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের নামে ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি শেয়ার, অপারচর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৮৩ লাখ ২১ হাজার ৫২০টি শেয়ার, রাকাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৫৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৬টি এবং কাসরাজ ট্রেডিং লিমিটেডের নামে এক কোটি ১৬ লাখ ২১ হাজার ৬৫৬টি শেয়ার থাকা অবস্থায় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
পরে জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির নিয়মানুযায়ী কোম্পানিগুলোর মালিকানা পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলোর ইনকাম ট্যাক্স ফাইল নবায়ন না করে মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে। আর কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের সবাই একই ব্যক্তি এবং অপুর অফিসের কর্মচারী। কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয় অথচ এই নতুন পরিচালকদের টিআইএন নম্বর নেই। এ অবস্থায় ট্যাক্স ফাইল না থাকায় তারা ৪০ কোটি টাকার বেশি কোথায় পেলেন তা তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লাহ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
পরে এসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মো. মনিরুজ্জামান। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করলেন।
