গত জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬৩ জন। জুলাইয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জনে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। পাশাপাশি এ মাসের ৫ দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৫ জুলাই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৪৭ জন। পরদিন ২৬ জুলাইয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০৩-এ। ২৭ জুলাই ৬৮৩ জন, ২৮ জুলাই ৮২৪ জন এবং ২৯ জুলাইয়ে (সোমবার) তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৬ জনে।
ঢাকার বাইরেও আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কন্ট্রোল রুমের হিসাব থেকে জানা যায়, ঢাকার বাইরে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫৩১ জন।
কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৩৭ জন। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৯ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে ১ হাজার ৮৬৩ এবং জুলাইয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জনে।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৫ হাজার ৫৫১ জন। এরপর ২০০১ সালে ২ হাজার ৪৩০ জন, ২০০২ সালে ৬ হাজার ২৩২ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬, ২০০৪ সালে ৩ হাজার ৪৩৪ জন, ২০০৫ সালে ১ হাজার ৪৮ জন, ২০০৬ সালে ২ হাজার ২০০ জন, ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে ১ হাজার ১৫৩ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০১০ সালে ৪০৯ জন, ২০১১ সালে ১ হাজার ৩৫৯ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৭৪৯ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন, ২০১৫ সালে ৩ হাজার ১৬২ জন, ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৬০ জন, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৬৯ জন এবং ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘২০১৮ সালে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১০ হাজার ১৩৮ জন। সেটি ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যে রেকর্ড করেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুর যে ধরন ছিল এবার তা ভিন্ন। এ কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও মানুষ বুঝতে পারছে না।
তবে এ মাসের শুরুর দিকে চিকিৎসকরা এক দিনের জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে পরামর্শ দেন। এরপর থেকে মানুষ সচেতন হয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার প্রজনন ও বর্জ্য অবস্থাপনা—সব মিলিয়ে এত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সচেতনতা না বাড়ালে ডেঙ্গু ম্যানেজ করা খুব কঠিন। আর যখন রোগটা হয়ে গেলো, তখন তার সঠিক সময়ে ডিটেকশন এবং ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘সঠিক সময়ে ডায়াগনসিস হওয়ার পর সাপোর্টিভ ম্যানেজমেন্ট দেওয়া গেলে মৃত্যুর হার হয়তো কম হতো বা অনেকাংশে সেভ করা যেতো। আর এটা এখনও সম্ভব।’
ডা. মাহমুদুর আরও বলেন, ‘আগে যেমন রক্তক্ষরণ হয়ে প্লাটিলেট কম হতো এবারে সেরকম না, অনেক ক্ষেত্রেই রোগী শকে চলে যাচ্ছে সরাসরি। প্লাটিলেট স্বাভাবিক থাকলেও রোগী শকে চলে যাচ্ছে—এমনটাও হচ্ছে এবার।’