X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রূপনগরে বস্তির সহস্রাধিক ঘর পুড়ে ছাই

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ আগস্ট ২০১৯, ২২:৪৪আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ২৩:০৭

মিরপুরে বস্তিতে আগুন মিরপুরের রূপনগরে চলন্তিকা মোড়ের পাশের ঝিলপাড়ের বিশাল বস্তিতে লাগা আগুনে সহস্রাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি। তবে আগুনের ভয়াবহতা কমে এসেছে।সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বস্তিটিতে আগুন লাগে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বস্তিটি কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার লম্বা। এতে হাজার হাজার ঘর ছিল। এর প্রায় সবই পুড়ে ছাই হয়েছে।তবে আগুনে হতাহতের কোনও খবর এখনও ফায়ার সার্ভিস বা অন্য কোনও সূত্রে জানা সম্ভব হয়নি।

আগুন লাগার কারণ এখনও জানাতে পারেনি কোনও সূত্র। তবে কেউ কেউ ধারণা করছেন,বস্তির কোনও ঘর থেকে রান্না করার সময় অসাবধানতাবশত আগুন লাগে। পরে তা দ্রুত পুরো এলাকায় ছড়িয়ে যায়।তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। তবে কোনও পক্ষই এসব তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। আগুন নেভাতে ব্যস্ত থাকায় ফায়ার সার্ভিস এসব বিষয়ে কোনও বক্তব্য এখনও দেয়নি।

ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মিরপুরে বস্তিতে আগুন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আগুন লাগার খবর শুনে বস্তির সব মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। অনেকে ঘরের মালপত্র সরানোর চেষ্টা করেও আগুনের উত্তাপের কারণে পারেননি। পরিবার সদস্যদের নিয়ে বের হতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। তাদের অনেককে আশেপামের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন স্বজনরা। কয়েকজন বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,ঘর থেকে  বের হওয়ার সময় অনেককে পড়ে গিয়ে বা আগুনের আঁচে  আহত হতে দেখেছেন তারা। এসময় তীব্র ধোঁয়ার সৃষ্টি হওয়ায় অনেকে অসুস্থ হন। বস্তিটির বেশিরভাগ বাসিন্দা পোশাক শ্রমিক ছিলেন বলে জানিয়েছে অনেকে।

এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট কাজ করছে। তাদের সহযোগিতা করছে, পুলিশ ও ওয়াসা। সন্ধ্যার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় বস্তির বাসিন্দারা বেশিরভাগই বাইরে ছিল। ঈদের ছুটি থাকায় পোশাক কারখানার কর্মীরাও ছুটি কাটিয়ে এখনও বস্তিতে ফেরেনি।

মিরপুরে বস্তিতে আগুন শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার মো. এরশাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে কী কারণে এই আগুনের সূত্রপাত, সেটি প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।’

জাহানারা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমার ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তির বেশিরভাগ বাসিন্দারাই বের হয়ে আসতে পেরেছে। ঈদের ছুটির কারণে পোশাক শ্রমিক যারা এখানে ভাড়া থাকেন, তারা এখনও আসেননি। তাই বস্তির ভেতরে আটকা পড়ার আশঙ্কা কম।’

আবুল হোসেন নামে বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, ‘বস্তির ভেতরে আমার আমার ৯টা ঘর রয়েছে। এগুলো আমি ভাড়া দেই। একটি ঘরও বাঁচেনি। সব পুড়ে ছাই।’

আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে আবুল হোসেন বলেন,‘ শুনেছি বস্তির উত্তর পাশে ফরিদ নামের একজনের ঘর থেকে আগুন লেগেছে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত না।’

তানিয়া নামের একজন নারী বলেন, ‘বস্তিতে আমার ১৫টি ঘর রয়েছে। সব পুড়েছে। আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বের হয়ে এসেছি। কিছু বের করতে পারিনি।’

মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী সাহস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে সহস্রাধিক ঘর রয়েছে। অন্তত একলাখ মানুষ বসবাস করে। নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস।’

মিরপুরে বস্তিতে আগুন স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের অনেকগুলো গাড়ি এলেও আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কেবল বাইরের দিকেই পানি দিতে পেরেছে। আগুনের তীব্রতা খুব বেশি ছিল, তাই তারা ভেতরের দিকে ঢুকতে পারেনি। বস্তিটাও বিশাল। অনেকগুলো গলি। আর এরইমধ্যে একবার হালকা বৃষ্টি হয়। তখন মনে হয়েছিল বুঝি বৃষ্টির পানিতে আগুন নিভে যাবে। কিন্তু বৃষ্টি থেমে উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হতে থাকলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়। ফলে ভেতরের-বাইরের সব ঘরই পুড়ে যায়।

তিনি জানান, এই বস্তির পাশের একটা মসজিদের ছয়তলা পর্যন্ত আগুন লাগে। মসজিদে আটকে পড়া মানুষদের পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে উদ্ধার করেছে।

আবদুল করিম নামে স্থানীয় আরেকজন জানান, বস্তির সব ঘর বাঁশ-কাঠ-টিন দিয়ে তৈরি। এ কারণে আগুন একটার পর একটা বাড়ি গ্রাস করে। আর উত্তাপ এত বেশি হয়েছিল যে বস্তির মাঝখানে ফায়ার সার্ভিসের মানুষ তো দূরে থাক পানিও দিতে পারেনি।

এসময় অনেক বস্তিবাসী এই আগুনকে ‘ষড়যন্ত্রের আগুন’, তাদেরকে ‘উচ্ছেদের জন্য পরিকল্পিতভাবে লাগানো আগুন’ বলেও অভিযোগ করছিলেন।

জানা গেছে, এই ঘটনায় অন্তত দুই জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এখনও কোনও নিখোঁজের খবর পাইনি। হতাহতের বিষয়ে এই মূহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা ধারণা করছি হতাহত হবে না।’


আরও খবর...

মিরপুরে বস্তিতে আগুন (ভিডিও)

রূপনগর বস্তির আগুন ছড়িয়েছে পাশের বহুতল ভবনেও

বাতাসের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন, হতাহতের আশঙ্কা

/এসজেএ/এআরআর/এনআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা