X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিল্কভিটাকে বঙ্গবন্ধুর বরাদ্দ দেওয়া জমির ৮০ ভাগই বেদখল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৩২আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৯, ২৩:৪৩

মিল্কভিটা সরকারের মালিকানাধীন সমবায় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা)-এর পাঁচ হাজার একর গোচারণ ভূমির মধ্যে চার হাজার একরই বেদখল হয়ে আছে। এই জমি উদ্ধারে দৃশ্যত কোনও তৎপরতা নেই মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের। এ কারণে উষ্মা প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে মিল্কভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে মিল্কভিটাকে পাঁচ হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বর্তমানে সেই জমি বেহাত। এখন মাত্র এক হাজার একরের মতো জমি তাদের হাতে আছে।’

তিনি বলেন, ‘মিল্কভিটা ও ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে অসাধু লোকজন জমি বরাদ্দ দিয়ে দখল করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে জমি দখল করেছে। এই জমি উদ্ধারে মিল্কভিটা কখনও আইনি লড়াইয়ে যায়নি। আমরা এই জমি উদ্ধারে মিল্কভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
বুধবার (২০ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু উপস্থিত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কমিটি। এছাড়াও মিল্কভিটার দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই ও বরখাস্তের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

সম্প্রতি বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সিসার উপস্থিতির বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। এ সময় মিল্কভিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিল্কভিটার পাস্তুরিত দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম সিসা রয়েছে। মিল্কভিটা কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও তুলে ধরেছে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘মিল্কভিটার দুধে যেটুকু সিসা পাওয়া গেছে, তা পানি ও খাদ্য থেকে গবাদিপশুর শরীরে গেছে। আমরা এ বিষয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার সুপারিশ করেছি।’

এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়, সঠিক মান বজায় রেখে সিসা, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত পণ্য সরবরাহ করার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

এছাড়া মিল্কভিটার আয়-ব্যয় ও মুনাফা নিয়েও আলোচনা হয়। কমিটি দৈনিক দুধ উৎপাদন ৩ লাখ লিটারে উন্নীত করার সুপারিশ করে। বর্তমানে দৈনিক ৯০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয় বলে কমিটিকে জানানো হয়েছে।

মিল্কভিটার লাভ বছরে বছরে কমে আসছে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে মিল্কভিটার মুনাফা হয়েছিলো ১১ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লাভ হয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যদি লাভ বেশি হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক আমলে লাভ কম হচ্ছে কেন? মিল্কভিটাকে তাদের মুনাফা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, গত বছর মিল্কভিটার দুরবস্থা ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৪ দফা সুপারিশ দেয়। এগুলো হলো- মিল্কভিটা রক্ষায় জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, গুঁড়োদুধ আমদানির ওপর সর্বোচ্চ করারোপ, প্রান্তিক-ভূমিহীন ও দরিদ্র খামারিসহ দুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, বেদখল হওয়া গো-চারণ ভূমি উদ্ধার, বিশেষ কিছু জমিতে সাধারণ ফসলের বদলে গরুর মানসম্মত ঘাস চাষ ও গরুর প্রজনন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা, দুগ্ধ শিল্পসমূহে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় বাণিজ্যিক বিল থেকে রেহাই দেওয়া।

সূত্র জানায়, এই সুপারিশের বিষয়ে মিল্কভিটার বেশিরভাগ কর্মকর্তা এখনও অবহিত নন।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি জানান, ‘এই সুপারিশ বাস্তবায়নে মিল্কভিটা এখনও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই সুপারিশ করে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে মিল্কভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও জিল্লুল হাকিম।

/ইএইচএস/এএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা