X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব কারণে এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়ালো

জাকিয়া আহমেদ
২৪ আগস্ট ২০১৯, ২৩:২৮আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৪০

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী (ফাইল ছবি)

দেশে প্রথম ডেঙ্গু ধরা পড়ে ২০০০ সালে। সেই থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৬ জন। কিন্তু শুধু এবছরের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই আগের ১৮ বছরের মোট হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি হিসাব অনুসারে, জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট (শুক্রবার) পর্যন্ত  ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ৩৮ জন, মারা গেছেন ৪৭ জন। তবে এই সংখ্যা সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি প্রতিহতের জন্য এখন মশক নিধনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে- জলবায়ু পরিবর্তন, ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা, অসচেতনতা, এডিস মশা নিধনে ‍ওষুধ কার্যকর না হওয়া, মশার প্রজননস্থলে নজরদারির অভাব, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে জড়িতদের স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা না থাকা এবং যে পরিমাণে মশার জন্ম হচ্ছে সেই হারে মশা নিধন না হওয়ায় এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু একটি এনডেমিক ডিজিজ। ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক মানুষ মারা যান। তবে এটা এখন সারাবছরই থাকে। গত বছরও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (শীতের সময়) দেশে কিছু কিছু জায়গায় ডেঙ্গু রোগী ছিল। আর বাংলাদেশের তাপমাত্রা প্রায় সবসময়ই ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো থাকে, যা এডিস মশার প্রজননের জন্য সহায়ক।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা আসলে হঠাৎ করে একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে বেড়েছে। গত বছর থেকেই ওষুধ কার্যকর ছিল না। একইসঙ্গে গতবছর থেকে ডেঙ্গুর ধরণ পরিবর্তন হয়েছে এবং এই রোগের সিভিয়ারিটি ( জটিলতা) বেড়েছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েছে বলেও মনে করেন ডা. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ যে শুধু বাংলাদেশেই তা নয়, বিশ্বের কয়েকটি দেশেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। আর এর কারণ ডেঙ্গুর সেরোটাইপ ( ধরন) বদলেছে।’ চার ধরনের ডেঙ্গুর মধ্যে চলতি বছর এবং গতবছর ডেন টু, থ্রি এবং ফোরও টাইপের ডেঙ্গু পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করেচেণ তিনি।  

বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এক কথায় বলবো মশা নিধন হয়নি। যেভাবে মশার প্রজনন হয়েছে, সেভাবে মশা নিধন হয়নি বলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার এতো বেশি।’

আবার জলবায়ুকে দায়ী করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া বিষয়ক কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা যখন অনেক বেশি থাকে, বৃষ্টি যখন থেমে থেমে হয়, তখনকার আবহাওয়াটাই এডিস মশা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাছাড়া যখন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলো, তখন মশার প্রজনন বন্ধ করতে যে সক্ষমতা দরকার তা আমাদের ছিল না। একইসঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ছিল না বা এখনও সেটা পুরোপুরো তৈরি করা যায়নি।’  

ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান দেশের বিভিন্ন নির্মাণাধীন এবং নির্মাণ হয়ে যাওয়া ভবনগুলোর ভুল নকশাকেও (ফলটি ডিজাইন) এডিস মশার প্রজননের জন্য দায়ী করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এসব ভবনের ওয়াসার লাইন, সুয়ারেজ লাইনের ডিজাইনে পরিকল্পনার অভাবকেও বড় কারণ বলে মনে হয়। এসব জায়গাতে এডিস মশা ডিম পারে।’ আবার রাস্তাঘাট, হাইওয়ে, মেট্রো রেল প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সময় পরিবেশ নোংরা হওয়াকেও মশার প্রজনন বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব থেকে জানা যায়- ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন পাঁচ হাজার ৫৫১ জন, মারা যান ৯৩ জন; ২০০১ সালে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৪৩০ জন, মারা যান ৪৪ জন; ২০০২ সালে আক্রান্ত হন ছয় হাজার ২৩২ জন, মারা যান ৫৮ জন; ২০০৩ সালে আক্রান্ত হন ৪৮৬ জন, মারা যান ১০ জন; ২০০৪ সালে আক্রান্ত হন তিন হাজার ৩৩৪জন, মারা যান ১৩ জন; ২০০৫ সালে আক্রান্ত হন এক হাজার ৪৮ জন, মারা যান চার জন; ২০০৬ সালে আক্রান্ত হন দুই হাজার ২০০ জন, মারা যান ১১ জন; ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯ এবং ২০১০ সালে যথাক্রমে আক্রান্ত হন ৪৬৬, এক হাজার ১৫৩ জন, ৪৭৪ জন এবং ৪০৯ জন; এই চার বছরে কেউ মারা যাননি। আবার ২০১১ সালে আক্রান্ত হন এক হাজার ৩৬৯ জন ও মারা যান ৬ জন, ২০১২ সালে আক্রান্ত হন ৬৭১ জন, মারা যান একজন; ২০১৩ সালে আক্রান্ত হন এক হাজার ৭৪৯ জন ও মারা যান ২ জন; ২০১৪ সালে আক্রান্ত হন ৩৭৫ জন, তবে কেউ মারা যাননি, ২০১৫ সালে আক্রান্ত হন তিন হাজার ১৬২ জন, মারা যান ছয় জন; ২০১৬ সালে আক্রান্ত হন ছয় হাজার ৬০ জন, মারা যান ১৪ জন; ২০১৭ সালে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৭৬৯ জন, মারা যান ৮ জন এবং গত বছর ২০১৮ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ২৬ জন। 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়