X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালজুড়ে ময়লার ভাগাড়!

জাকিয়া আহমেদ
২৭ আগস্ট ২০১৯, ০৮:০০আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০১৯, ১৬:০২

হৃদরোগ হাসপাতাল এলাকায় ময়লা ‘হাসপাতালের পরিবেশ হবে সুন্দর ও জীবাণুমুক্ত। কিন্তু, গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই নাকে দুর্গন্ধ অনুভব হয়। রোগীদের কোনও উপায় থাকে না বলেই ভেতরে যেতে হয়, চিকিৎসা নিতে হয়।’ ৭২ বছর বয়সী বাবাকে নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা একরাম উদ্দিন শেখ এসব কথা বলেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়। গেটে বসা জুতা সেলাইয়ের দোকান, জুসের দোকান ও পানের দোকান দেখিয়ে অবসরপ্রাপ্ত এই কলেজশিক্ষক বলেন, ‘এটা কোনও হাসপাতালের প্রবেশপথ হতে পারে! এত নোংরা, এত দুর্গন্ধ। এখানে তো রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে যাবেন।’

হাসপাতালের তিন তলায় ওঠার সিঁড়িতে কথা হয় ২৫ বছর বয়সী সাইফের সঙ্গে। বাবা মীর আখলাস কোরাইশীকে নিয়ে এসেছেন তিনি। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা বলতেই সাইফ তিন তলার সিঁড়ি থেকে দুই ভবনের মাঝের স্থান দেখিয়ে বলেন, ‘এখানে যে কী পরিমাণ ময়লা জমা হয়ে থাকে, সেটা অকল্পনীয়।’

হৃদরোগ হাসপাতাল এলাকায় ময়লা রবিবার (২৫ আগস্ট) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের আবর্জনা, জমে রয়েছে পানি ও হাসপাতাল চত্বরের ভেতরে পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। মূল ভবনের পাশেই নির্মাণাধীন নতুন ভবন। সেখানে নানা নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। ইট, বালি, বাঁশ ও মাটি দিয়ে সামনের জায়গা আটকানো। পাশের ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকায় সেখানে যেমন দুর্গন্ধ, তেমনি নানা ধরনের পোকাও উড়ছে। তবে, কর্তৃপক্ষ হাসপাতালজুড়ে ময়লার ভাগাড়ের জন্য দায়ী করছেন রোগীদের। আর নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণসামগ্রীর স্তূপের জন্য দায়ী করেছেন গণপূর্ত অধিদফতর ও সিটি করপোরেশনকে।

রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীত দিকের গেট দিয়ে হৃদরোগ হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই নাকে আসে স্যুয়ারেজ লাইনের দুর্গন্ধ, ভেতরে তাকাতেই দেখা যায় বিশাল নির্মাণাধীন ভবনের পাশের স্যুয়ারেজ লাইন খোলা; ম্যানহোলের ঢাকনাও খোলা। ভেজা মাটিতে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাগজ, পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের ড্রাম। 

হৃদরোগ হাসপাতাল এলাকায় ময়লা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও উপপরিচালক ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগে এয়ার কন্ডিশনারের পানি যেখানে এসে জমা হতো, যে পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে, সেসব জায়গাতে যেন পানি জমতে না পারে, সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর এখন হাসপাতালের আরেকটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে, ঈদের পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ যখনই বেড়েছে, তখন থেকেই পরিষ্কারের কাজ চলছে।’

হৃদরোগ হাসপাতাল এলাকায় ময়লা হাসপাতাল চত্বরের ভেতরে ময়লার জন্য মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করে ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘মানুষ হাতের ময়লা কাগজ, চিপসের প্যাকেট, খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, পলিথিন সবকিছু ওয়ার্ডের জানালা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। প্রতিদিন সেসব পরিষ্কার করা হচ্ছে।  সকালে পরিষ্কার করা হলে দুপুর নাগাদ আবারও নোংরা হয়ে যায়।’

হৃদরোগ হাসপাতাল এলাকায় ময়লা ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘গত কয়েকদিনে আমরা যেসব আবর্জনা কনডেম ঘোষণা করেছি, সেগুলো পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, তাদের সঙ্গে গত আটদিন ধরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু, তারা আগামী শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সেগুলো নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আমাদের। এসব বর্জ্য আমরা কেবল ডাম্পিং করি, তারা নিয়ে যায় তাদের গাড়ি দিয়ে। এখন কেবল সিটি করপোরেশনের গাড়ির জন্য অপেক্ষা, তারা শুক্রবারের কথা জানিয়েছে। কিন্তু, আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি, যদি শুক্রবারের আগেই সব আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া যায়; তাহলে সেটা আমাদের সবার জন্য ভালো।’

ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘হাসপাতালের ভার্টিক্যাল এক্সটেনশনের কাজ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের বর্জ্যগুলো যদি প্রতিদিন বা একদিন পরপর পরিষ্কার করা যেতো, তাহলে এসব রাবিশ জমা হতো না। কিন্তু, কনস্ট্রাকশন যে প্ল্যান ওয়াইজ হওয়া উচিত, যেকোনও ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক-বিশেষ করে হাসপাতালে সেটা হচ্ছে না, এটা নিয়ে আরও ভাবা উচিত।

হৃদরোগ হাসপাতাল এলাকায় ময়লা আর নির্মাণাধীন ভবনের সব আবর্জনা ফেলার দায় হচ্ছে নির্মাণকাজ করা প্রতিষ্ঠানের। সাধারণত একটা বাউন্ডারি দিয়ে কনস্ট্রাকশন করার নিয়ম থাকলেও সেটা হচ্ছে না, সেখানেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে।’ কিন্তু, কে কার কথা শোনে মন্তব্য করে ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘পিডব্লিউডি তো আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নয়।’

হৃদরোগ হাসপাতাল গেট হাসপাতালের ভেতরে পান-সিগারেটের দোকান, বাদামের দোকানসহ জুস বিক্রেতারাও রয়েছে। যারা এখানে সেখানে লেবুর খোসা, পানি ফেলছে। এসব দোকান কেন সরানো হচ্ছে না জানতে চাইলে ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে প্রশাসন থেকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে রাউন্ড দেওয়া হয়, তাদের সরানো হয়, কিন্তু কোনও এক ফাঁকে এসে তারা আবার বসে। এতগুলো গেট, এত মানুষ ঢোকে, আমরা আসলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’

/এনআই/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫