বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) মিন্নির জামিন প্রদানকারী হাইকোর্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে মিন্নিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। যেহেতু তিনি নারী এবং তিনি তার বাবার জিম্মায় থাকবেন, তাই তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে এই জামিনের তিনি অপব্যবহার করবেন না এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কিন্তু তিনি যদি জামিনের শর্তের অপব্যবহার করেন, তাহলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মিন্নির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তিনি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। যা-ই হোক, আদালত তবু তাকে জামিন দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর আগে মিন্নিকে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন দেন। আদালত তার আদেশে বলেন, ‘জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এ সময়ে মিন্নি তার পিতার হেফাজতে থাকবেন এবং জামিনের অপব্যবহার করলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন।’
আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মশিউর রহমান ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।
গত ৮ আগস্ট মিন্নিকে সরাসরি জামিন না দিয়ে জামিনের বিষয়ে রুল জারি করতে চাইলে আবেদনটি (জামিন) ফেরত নিয়েছিলেন তার (মিন্নির) আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
এরপর গত ১৮ আগস্ট হাইকোর্টের নতুন আরেকটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবীরা। ওই আবেদনের শুনানিকালে রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিকে কবে ও কখন গ্রেফতার, আদালতে নেওয়া ও তার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুলিশ সুপার কবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেসব তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে ১৬ জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একই দিন রাত ৯টায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরদিন (১৭ জুলাই) মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর কয়েক দফা আবেদন জানালেও নিম্ন আদালতে জামিন মেলেনি মিন্নির। পরে একই মামলায় জামিন চেয়ে মিন্নি হাইকোর্টে আবেদন করেন।
আরও পড়ুন:
হাইকোর্টে মিন্নির জামিন, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা যাবে না