X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট আড়াল করতে ইন্টার্নদের পাঠানোর চিন্তা!

জাকিয়া আহমেদ
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২৩:৩৫আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:১৯





উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট আড়াল করতে ইন্টার্নদের পাঠানোর চিন্তা! উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্গানোগ্রামে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৪টি। অথচ এসব পদ পূরণে কোনও উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় সেখানে ইন্টার্নদের পাঠানোর চিন্তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলছেন, ইন্টার্নশিপ স্বাস্থ্যসেবার অংশ নয়, স্বাস্থ্যশিক্ষার অংশ। থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেই শিক্ষার সুযোগ খুবই কম। এতে ইন্টার্নদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে স্বাস্থ্যসেবার।
অন্যদিকে, সরকারি চাকরিতে থাকা একজন চিকিৎসকের বেতন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেখানে একজন ইন্টার্নের মাসিক ভাতা ১৫ হাজার। টাকা বাঁচাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর এমবিবিএস পাস করে বের হচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার জন। তাদের পোস্টিং দিলেই তো চিকিৎসক সংকট দূর হয়।
গত ২৭ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য দুই বছরের ইন্টার্নশিপের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা করার প্রস্তাব দেয়। তবে দেশজুড়ে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও চিকিৎসক সমাজের বিরোধিতার মুখে ১ সেপ্টেম্বর এই নীতিমালা বাতিল করে মন্ত্রণালয়। তবে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলছেন, তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে একেবারে সরে আসেনি। আন্দোলনের মুখে আপাতত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করেছে মাত্র।
চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)। সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক মাসিক ভাতা হিসেবে পান মাত্র ১৫ হাজার টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অথচ ইন্টার্নশিপ করা চিকিৎসকরাই একটি হাসপাতালের প্রাণ। একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক গড়ে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার মতো কাজ করেন।’ এটা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নির্ধারণ করে দেওয়া কর্মঘণ্টার চেয়েও বেশি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে বিরাজমান চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে যদি এটা করা হয়ে থাকে, তাহলে তা হবে ভীষণ অন্যায় এবং জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ।’ পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট দূর করার দাবি জানান তিনি। তার মতে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ অন্যায্যভাবে বাড়িয়ে সেটা করা ঠিক হবে না।
ডা. মিল্টন বলেন, গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই যদি এর উদ্দেশ্য হয়, তবে ইন্টার্নশিপের নির্ধারিত এক বছরের মধ্যে এক মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। এর জন্য বাড়তি এক বছর সময়ক্ষেপণ বলে মনে করেন তিনি।
প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালার বিরোধিতা করে গত ৩১ আগস্ট প্রথম আন্দোলনে রাজপথে নামেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ।
এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বাপ্পী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে পোস্ট খালি, ইন্টার্ন কেন হবে বলি’—কেবল এই প্রশ্নের জবাব চান তারা।
তিনি বলেন, ‘টারশিয়ালি লেভেলে যেখানে চিকিৎসক-নার্স-ওষুধ-প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব, সেখানে নজর না দিয়ে উপজেলা পর্যায়ে তারা আমাদের পাঠাচ্ছে, এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল যুবাইর বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে প্রজ্ঞাপনটা আপাতত প্রত্যাহার করা হলো। কিন্তু আমরা চাই এটা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হোক।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার করিমুজ্জামান মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে না, পাঠানো হলেও তারা সেখানে থাকছেন না। নিয়ম মতো বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চিকিৎসকরা সেখানে যাবেন, কোনও ইন্টার্ন চিকিৎসক যাবেন না। তাহলে কেন এই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সেখানে পাঠানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে?’
মন্ত্রণালয় কি তাদের ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে চায় কিনা, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বলেন, ‘এই পুরো প্রক্রিয়াটাই অবৈধ। কারণ, সেখানে নির্ধারিত একটি অর্গানোগ্রাম রয়েছে।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা নিয়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে এর সুবিধা-অসুবিধা, লাভ-ক্ষতি, চ্যালেঞ্জ কী, আদৌ দরকার রয়েছে কিনা— সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিষয়টি দেওয়ার আগে আমাদের আরও হোমওয়ার্ক করার দরকার ছিল। কারণ, আমরা তো এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে যাইনি।’ বিষয়টি একেবার প্রাথমিক অবস্থায় আছে, এর জন্য আরও সময় দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা ভালোবাসার এক সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা ভালোবাসার এক সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ