X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘এ লিফট শিক্ষার্থীদের জন্য, রোগীরা যেতে পারবেন না’

জাকিয়া আহমেদ
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:১২আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১২

লিফটে উঠতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন রহিমা ও অন্য রোগীরা সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিচতলা। ডেঙ্গু রোগী মোসাম্মত রহিমা নিচতলা থেকে যাবেন নবম তলায়। তিনি সেখানে ভর্তি আছেন। কিন্তু তার আর যাওয়া হলো না। ‘কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এ লিফট নির্ধারিত, তাই রোগীরা যেতে পারবেন না’ বলে সে সময় লিফট থেকে রোগীদের নামিয়ে বাতি নিভিয়ে দেন লিফটম্যান। লিফটম্যানের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ রোগীরা বলেন, হাসপাতালে রোগীর জীবনের চেয়ে নিয়মরক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রবিবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ দৃশ্য দেখা যায়।

পরে এ বিষয়ে ওই লিফটম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার নাম জয়। এ লিফট কেবলমাত্র মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাই ওঠানামা করেন। তবে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এ প্রতিবেদকও পরে সেই লিফটেই যাতায়াত করেছেন।

সে সময় দেখা যায়, লিফটে ওঠার জন্য অপেক্ষমাণ মোসাম্মত রহিমার বাঁ হাতে স্যালাইন লাগানো ছিল। সেটি ধরে আছেন তার ভাই। ডান হাতে ক্যানোলা লাগানো। অত্যন্ত দুর্বল রহিমা লিফটম্যানকে অনেক অনুরোধ করার পরও তাকে বের করে দেন লিফটম্যান। এ সময় অন্য রোগীরা না বের হতে চাইলে তিনি লিফটের লাইট অফ করে দেন। রোগীরা সরে গেলে তিনি পুনরায় লাইট অন করে উপরে চলে যান।

বন্ধ করে দেওয়া লিফট ভুক্তভোগী রোগী মোসাম্মত রহিমা জানান, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালের নবম তলায় ভর্তি আছেন। সকালে রক্ত পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালের নিচতলায় আসতে হয়েছে। তিনি এতো অসুস্থ যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। বারবার পড়ে যাচ্ছিলেন। তবুও তাকে নয়তলার ওয়ার্ডে উঠতে হবে। অন্য লিফটগুলোর সামনেও ছিল দীর্ঘ ভিড়। ভিড় এড়াতেই ওই লিফটের সামনে ফাঁকা পেয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদক কথা বলেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে। তারা বললেন, ‘এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা। একটি হাসপাতালে একজন রোগীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেউ না। একহাতে স্যালাইন, আরেক হাতে ক্যানোলা নিয়ে যখন একজন রোগী লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তাকে ধরে রাখতে হয়– তখন তাকে লিফট থেকে বের করে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিক কাজ!’

জানতে চাইলে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খান বলেন,  ‘চার নম্বর লিফটি ৭টা থেকে ২টা পর্যন্ত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করা হয়।’  হাসপাতালের পক্ষ থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে লিফট থেকে বের করে দেওয়ার কোনও নির্দেশনা আছে কিনা? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনও নিদের্শনা দেওয়া নেই। আপনি বিষয়টি জানালেন, আমি লিফটম্যানকে অবশ্যই কাল জিজ্ঞেস করবো। তাদের বলা আছে, যদি লিফট ফাঁকা থাকে তাহলে রোগী চাইলে অবশ্যই খুলে দিতে হবে। এখন একেকজন একেকভাবে দেখে। একেকজনের আচরণের ধরন একেক রকম হয়। কিন্তু তারপরও ওদেরকে রোগীদের যাতায়াতে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে সে বিষয়ে আমরা তাদেরকে আবার নির্দেশ দেব।’

এ বিষয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লিফটম্যান মানবিকতা বিবর্জিত হলে কিছু করার নেই। সুবিধাবঞ্চিতরা সুবিধা পাবে না এটাই আমাদের এখানকার চিত্র।’

 

/জেএ/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা