X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেষণে নিয়োগের ‘প্রাধান্যে’ ক্ষুব্ধ দুই সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

শাহেদ শফিক
০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:১১আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:১৪

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি

বিভাগীয় প্রধানসহ বেশ কয়েকটি পদে প্রেষণে (নিয়মিত পদ বা কর্মবিভাগ থেকে অন্য পদ বা কর্মবিভাগে অস্থায়ীভাবে প্রেরণ) নিয়োগের ব্যবস্থা রেখে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির প্রায় পৌনে ৯ বছর পর এই বিধিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকার কারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শূন্যপদে নিয়োগ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে ছিল। এর মাধ্যমে করপোরেশনের জনবল সংকটের পথ কাটলেও বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন পদে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রও অসন্তুষ্ট। তারা জানিয়েছেন, বিধিমালার যেসব বিষয় স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘স্বার্থ পরিপন্থী’ সেসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হবে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সই করা পৃথক দুটি গেজেটের মাধ্যমে এই বিধিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুই সিটি করপোরেশন এই গেজেট পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগবিধি অনুমোদন না হওয়ায় মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল নিয়ে চলতে হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনকে। এই বিধিমালার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা নিয়োগ জটিলতা কেটেছে। বর্তমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুই হাজার ৪২৪ জন ও উত্তর সিটি করপোরেশন ১ হাজার ৮৫৮ জন স্থায়ী জনবল রয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯০ সালের মার্চে তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) সাংগঠনিক কাঠামো চূড়ান্ত হয়। এরপর ২০১১ সালের নভেম্বরে ডিসিসি ভাগ হয়ে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নামকরণ করা হয়। এরপর শুরু হয় সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির কাজ। খসড়া প্রস্তুতের পর ২০১৩ সালে সেটি মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল সাংগঠনিক কাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত হয়। পরে তা পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সব বিভাগীয় প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে শুধুমাত্র প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখায় দুই সিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে দুই সিটির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আপত্তি জানানো হলেও সে অনুযায়ী নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

চূড়ান্ত হওয়া নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য মেয়রের একান্ত সচিব, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার স্টাফ অফিসার, সচিব, আইন কর্মকর্তা, সিস্টেম অ্যানালিস্ট, প্রটোকল কর্মকর্তা, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা, প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা, নিরীক্ষা কর্মকর্তা, কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলের মহাব্যবস্থাপক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা, সম্পত্তি কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক, পরামর্শক (সার্জারি-১), গাইনি-১, অ্যানেসথেশিয়া-১, প্যাথলজি-১, রেডিওলজি-১,ফিজিশিয়ান-১, রেসিডেন্ট সার্জন (গাইনি-১ ও সার্জারি-১), রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান, মেডিক্যাল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, মেট্রোন, ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের পরিচালক, পরামর্শক (মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, প্যাথলজি ও রেডিওলজি), আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,  আবাসিক সার্জন, মেডিক্যাল অফিসার, মেট্রোন, নাজিরা বাজার মাতৃসদনের উপ-পরিচালক কাম পরামর্শক (গাইনি), পরামর্শক (অ্যানেসথেশিয়া), আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, অ্যানেসথেশিয়া, মেডিক্যাল অফিসার (প্যাথলজি), বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ শাখার জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের পদ প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।

একই অবস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও। সংস্থাটির মেয়রের একান্ত সচিব, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার স্টাফ অফিসার, সচিব, প্রটোকল কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা, নিরীক্ষা কর্মকর্তা, কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলের মহাব্যবস্থাপক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা, সম্পত্তি কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের পদ প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া দুই সিটির আরও অন্তত অর্ধশতাধিক পদে প্রেষণে, সরাসরি ও পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে একই দফতরে কাজ করে আসা কর্মকর্তারা তাদের বিভাগীয় প্রধান হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে শুধু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব ছাড়া অধস্তন সব কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মাধ্যমে বিভাগীয় প্রধান হওয়ার সুযোগ ছিল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সিটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই নিয়োগবিধির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। কারণ অধস্তন কর্মকর্তারা এখন আর ভালো কোনও কাজ করতে চাইবেন না। কারণ ভালো কাজ করলেও তাদের পদোন্নতি অনেক সীমিত। এছাড়া প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের দফতরের কাজ সম্পর্কে বুঝে উঠতে এক থেকে দুই বছর সময় লাগে। অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চলে যাওয়ার সময় হয়ে যায় তাদের। তাহলে তারা কীভাবে একটি সংস্থাকে ভালো কিছু দিতে পারবে?

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এতে বেশ কিছু পদ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। কোথায় কোথায় সমস্যা আছে সেটা আমরা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানাবো। তবে এই বিধির ফলে অন্তত আমাদের যে জনবল সংকট রয়েছে, নিয়োগের মাধ্যমে সেটি দূর করতে পারবো।’

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদোন্নতিও এই বিধির জন্য আটকে ছিল। আমার লোকজনের অভিজ্ঞতাকেই আমি প্রাধান্য দিতে চাই। আমি প্রেষণে আনবো কি আনবো না সেটা আমার ওপর নির্ভর করবে। এই নিয়োগবিধি আটকে থাকার কারণে একজন স্টাফ ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে কাজ করার পরও তাদের পদোন্নতি হয়নি। জনবলের মধ্যে যাদের অভিজ্ঞতা আছে দায়িত্ব বণ্টনে আমি তাদের প্রাধান্য দেবো।’

তিনি বলেন, ‘এটাও সত্য যে, একজন কর্মকর্তা প্রেষণে আসার পর দুই থেকে চার বছরের মাথায় আবার বদলি হয়ে চলে যান। একটা দফতরে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার পর তার চলে যাওয়ার ঘণ্টা বাজে। এটা আমাদের জন্য বড় দুর্ভাগ্য। যদি পদোন্নতি পেয়ে এই পদগুলো পূরণ হতো অনেক ভালো হতো। সিটি করপোরেশন তার জনবলের পূর্ণ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারতো।’

 

 

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী