সাউথ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. শাহীন আলম ওরফে ওমর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও নব্য জেএমবিকে এক করতে চেয়েছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুই সংগঠনকে এক করার উদ্দেশ্যে উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল শাহীন আলম। তবে এ প্রচেষ্টা বেশিদূর এগোনোর আগেই তিনিসহ চার জন আনসার আল ইসলাম সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ।’
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। শাহীন ছাড়া বাকি সদস্যরা হলো—মো. সাইফুল ইসলাম, মো. হানিফুজ্জামান ওরফে বিপ্লব ও মো. আল মামুন। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি চাপাতিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণ জব্দ করা হয়েছে।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সেল হিসেবে কাজ করছিল। কথিত শায়েখের নির্দেশে তারা ট্রেনিং নিয়েছে। চার জনের নেতা শাহীন আলম। সে সাউথ কোরিয়ার আংশু ইউনিভার্সিটির এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করে। পরে এই গ্রুপের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের মূল নেতাদের সঙ্গে তার সংযোগ হয়। কিছু দিন আগে দেশে ফিরে আসে সে। দেশে ফিরে হিজরত করার জন্য আরও কিছু লোককে উদ্বুদ্ধ করে। শাহীন আলমের উদ্দেশ্য ছিল আনসার আল ইসলাম ও নব্য জেএমবিকে একই ব্যানারে বা প্লাটফর্মে নিয়ে আসা।’
এই গ্রুপটি সুন্দরবন ও বান্দরবানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে সিটিটিসির তদন্ত কর্মকর্তারা। সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রুপটি সুন্দরবনের করমজল এলাকায় প্রথমে সাত দিনের ট্রেনিং নেয়। তারা মূলত চাপাতি ব্যবহার করে। আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও ব্যবহার কম করেছে। বোমা ব্যবহারের প্রমাণ আমরা আগে পাইনি। সুন্দরবনের পর বান্দরবানের আলীকদমে একটি জায়গা লিজ নেয় তারা। সেখানে কফি শপের আড়ালে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম ও ট্রেনিংয়ের কাজ করতো। এ সময় তারা এক মাসের প্রশিক্ষণ নেয়।’
তিনি জানান, আনসার আল ইসলাম গঠিত হওয়ার পর তারা ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। এই গ্রুপটিও চাপাতি ও অন্যান্য ফিজিক্যাল প্রশিক্ষণ নেয়। এছাড়া ধর্মের অপব্যাখ্যার কাজটিও তারা পুরোপুরিভাবে করছিল।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শাহীন আলম ছাড়া বাকি তিন জনের একজন সাইফুল ইসলাম। সে একটি মাদ্রাসার ছাত্র এবং হানিফুজ্জামান ও আল মামুন কলেজের (এইচএসসি) ছাত্র। তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে হানিফুজ্জামানের বিপ্লবের একটি জিডি আমরা পেয়েছি। যাওয়ার আগে তার এক বন্ধুর কাছে বলে গিয়েছিল সুন্দরবন এলাকায় প্রশিক্ষণে যাচ্ছে।’
যে শায়েখের নির্দেশে শাহীন আলম ও তার গ্রুপের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সেই শায়েখকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এরা যেসব ডিভাইস ও শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতো আমরা সেগুলো সংগ্রহ করেছি। তাদের আদালতে উপস্থাপন করে আমরা রিমান্ড চাইবো। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সংগঠনের সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা জানা যাবে।’
এই শায়েখের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের নেতা সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া সাবেক মেজর জিয়ার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘এই কথিত শায়েখকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। কারণ, আপনারা জানেন এদের যে নেতা থাকে সেই মূলত হাইয়ার অথরিটির সঙ্গে কোঅর্ডিনেশনের কাজটা করে থাকে। এরা স্লিপারসেলের মতো করেই কাজ করে। কথিত শায়েখকে গ্রেফতার করা গেলে জানা যাবে মেজর জিয়ার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক আছে কিনা।’
কী উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সংগঠিত হচ্ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন যেহেতু তাদের কথিত টার্গেটকে হত্যা করতে পারেনি বা আক্রান্ত করতে পারিনি, তাই এই কাজ করার পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের একটা পরিকল্পনা ছিল তাদের। তারা প্রাথমিকভাবে বলেছে, এই সরকার মুরতাদ সরকার। পাশাপাশি তাদের ভাষায় নাস্তিক, ব্লগার যারা আছে তাদের পুনরায় টার্গেট করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।’
বর্তমানে মেজর জিয়া সাংগঠনিক কার্যক্রমে খুব বেশি সক্রিয় নয় বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। যদি সক্রিয় থাকতো তাহলে সিটিটিসির গোয়েন্দা জালে তার কার্যক্রমের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যেত বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য, মেজর জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বেশ কিছু মামলায় তাকে আমরা চার্জশিটভুক্ত করেছি। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে এখন ততটা সক্রিয় রয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই। আমাদের যে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আছে তাতে সে খুব বেশি সক্রিয় থাকলে আমরা কোনও না কোনও তথ্য পেয়ে যেতাম।
এদিকে, আবরার হত্যা মামলায় ৯ অক্টোবর একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে। আমরা এখনও কপি হাতে পাইনি। হাতে পেলে যতটুকু শেয়ার করা যায় সেটি করবো। শুধু একজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি এবং কোলাবরেশন ছাড়া সেটি প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।