অবৈধভাবে পাসপোর্ট পাওয়া রোহিঙ্গাদের শনাক্তে আলাদাভাবে কোনও কাজ করছে না পাসপোর্ট অধিদফতর। তবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়া রোহিঙ্গারা তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে দূতাবাস বা মিশনে গেলে সেখানে পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী তিন রোহিঙ্গা তরুণকে চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা দালালের মাধ্যমে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট পেয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। নোয়াখালীতে কর্মরত পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (ডিএসবি) দুই সদস্য তাদের কাগজপত্র ভেরিফিকেশন করে অনাপত্তিপত্র দেয়। এ অবস্থায় পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে তদন্ত কমিটি করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। রোহিঙ্গাদের হাতে এ রকম আরও পাসপোর্ট রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। অনেকে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া গেছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে। তবে এসব পাসপোর্টধারীকে চিহ্নিত করতে অধিদফতর এই মুহূর্তে আলাদাভাবে কোনও কাজ করছে না।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক (পাসপোর্ট) সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আলাদাভাবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট চিহ্নিত করার কোনও কাজ করছি না। তবে যারা নতুন পাসপোর্ট নিতে আসবে তাদের যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর সন্দেহজনক হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত বছরের এপ্রিলে তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময় অবৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে তা জানাতে পারেনি পাসপোর্ট অধিদফতর। তাদের কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিফতরের কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই।’
যেসব বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেছেন তাদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে বলে রেখেছি, পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যারা আসবে তাদের কাগজপত্র ভালো করে যাচাই করতে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে অবৈধ উপায়ে পাসপোর্ট সংগ্রহের অভিযোগে কমপক্ষে চারশ’ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ গ্রেফতার হয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। এসব মামলা গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ও সিআইডি তদন্ত করছে।
চট্টগ্রামের আকবর শাহ থেকে পাসপোর্টসহ গ্রেফতার তিন রোহিঙ্গা তরুণের মামলার বিষয়ে চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার (ডিসি) শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা মামলা তদন্ত করছি। কীভাবে তারা পাসপোর্ট নিয়েছিল, কারা জড়িত, আরও কারা এভাবে পাসপোর্ট নিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: টাকা দিলেই মিলছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট