রাজধানীর গুলশান দুই নম্বর এলাকায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদের গোডাউন ও মিনি বার-এর সন্ধান পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। লাইসেন্স ছাড়াই এখানে মদের গোডাউন ও মিনি বার গড়ে তোলা হয়; যেখানে বিক্রির উদ্দেশ্যে বিদেশি মদ মজুদ করা হতো। রবিবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান শেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের একথা জানান।
এর আগে এদিন সন্ধ্যার পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশান-২-এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ ও ও ১১/বি নম্বর বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে মদের গোডাউন ও মিনি বার-এর সন্ধান পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এসময় এখান থেকে ক্যাসিনোর বিভিন্ন সরঞ্জাম, চার কেজি সিসা মাদক (দুই প্যাকেট) ও সেবনের সরঞ্জাম, ৩৮২ বোতল বিদেশি মদ, ২শ’ গ্রাম গাজা এবং ২৪ ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। এ ছাড়া, ওই ভবনে থাকা আজিজের ছোট ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসা থেকে ১১ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। পরে ভবনের কেয়ারটেকার নবীন ও পারভেজকে আটক করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘অভিযানে বাড়ির দুই কেয়ারটেকারকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, তারা এসব মদ কেনাবেচা করতো। বাড়ির টপ-ফ্লোরে যে মিনি বার রয়েছে, তা আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। তবে সেটি পরিচালনা করতো তার ভাতিজা আহাদ মোহাম্মদ ভাই। অভিযানের আগেই সে এখান থেকে পালিয়ে গেছে।’
এই বার ও ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে কারা জড়িত—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকেন। বাড়িতে তার ছোটভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের দুই ছেলে বসবাস করতো।’
বাড়িটি দুই ভবনে বিভক্ত জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘একটি ভবনের চার তলার একটি ফ্ল্যাটে মদের গোডাউনের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ সাজিয়ে রাখা ছিল। অপর ভবনের টপ-ফ্লোরে অবৈধ মিনি বার ও সেখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও সিসা মাদক এবং ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এদিকে, ভবনের তৃতীয় তলায় আজিজের ছোট ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১১ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।’
অভিযানে মূল অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসবের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া, তার দুই ভাতিজা আহাদ ও ওমর মোহাম্মদ ভাইকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো আমরা।’
কতদিন ধরে এখানে এমন কার্যক্রম চলছিল, জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হবে। তদন্ত চলছে, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত বলা হবে। তবে শুধু সেবনের জন্য এখানে এত মদ মজুদ করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। এখানে মাদক ও অন্য সরঞ্জাম বিক্রি ও সরবরাহের উদ্দেশে রাখা হয়েছিল।’
সরেজমিনে দেখে ও ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলিশান ভবনের একপাশ আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার ছোট ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের; অপর পাশের ভবনটি আজিজের দুই বোন নুরজাহান ও সকিনার। বেশ কিছুদিন আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাই বিদেশে যান এবং রবিবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে অভিযানের আগেই আহাদ মোহাম্মদ ভাই তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
আরও পড়ুন–
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসা থেকে মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম জব্দ