X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে নারী শ্রমিকদের সৌদি আরবে পাঠানোয় হত্যাকাণ্ড ঘটছে’

ঢাবি প্রতিনিধি
০১ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৫৯আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০৬

সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা না থাকায় তারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শেখ বাতেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে শ্রমিকদের পাঠানোর কারণে অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে।’ শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের ওপর সৌদি মালিকদের বর্বরোচিত যৌন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জমায়েত’ শীর্ষক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। ‘নারী পক্ষের’ উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় অধ্যাপক বাতেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ দেশ থেকে সাধারণ নারীরা রুটিরুজির জন্য কাজ করতে সৌদি আরবে যায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বলছে, সৌদি আরবে নারীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। তারপরেও এদেশ থেকে নারীদের ওই দেশে পাঠানো হচ্ছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাস নারী শ্রমিকদের নিয়ে বাণিজ্য করে অর্থের ভাগ নেয়। আর তাদের লুণ্ঠনের ক্রসফায়ারে পড়েছে নারী শ্রমিকরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরও ও ওমানসহ কয়েকটি দেশের মালিকরা নারীদের ওপর নির্যাতন করে। এ কারণে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান নারীদের সেখানে পাঠানো বন্ধ করেছে। সৌদি আরবে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ফিলিপাইন সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কৈফিয়ত চায়। অথচ আমাদের দেশের নারী নির্যাতনের ঘটনায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিছুই করে না। তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনও সাড়া পাননি নির্যাতিত নারীরা। ফলে এ দেশের নারীরা অত্যাচার, যৌন-নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। এর জন্য দায়ী প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।’

নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা বলেন, ‘আমাদের দেশের নারী শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করতে গিয়ে যে নির্যাতনের শিকার হয়, তা সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করছে না। এমনকি বিদেশে যে দূতাবাস রয়েছে, তারাও কোনও খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। যেসব দালালের মাধ্যমে নারীরা বিদেশে যাচ্ছে, তাদেরও মনিটোরিং করা হচ্ছে না। এসব নারী শ্রমিকদের নিয়ে মাঠে কাজ করা সংগঠনগুলো এ বিষয়ে সরকারকে জানালেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। যারা নারীদের বিদেশে পাঠাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। বিদেশে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে ভাবতে হবে।’ 

সমাজকর্মী জাকিয়া শিশির বলেন, ‘সৌদি আরবে নারীদের ওপর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন আর চুপ থাকার সময় নেই। সবকিছুরই একটি সীমা থাকে। কিন্তু এটি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একজন নারী বিদেশে যাবে কাজ করার জন্য। সেখানে সে অত্যাচার, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে দেশে লাশ হয়ে ফিরে আসবে তা মেনে নেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া দরকার।’

সমাবেশে ১০ দফা দাবি পেশ করেন কথাসাহিত্যিক রাখাল রাহা। তাদের দাবিগুলো হলো–

১. রেমিট্যান্সের আশায় যথাযথ আইন অনুসরণ না করে সমঝোতার ভিত্তিতে নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন ও মৃত্যুর মুখে যারা ঠেলে দিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা। একই সঙ্গে নির্যাতন ও ধর্ষণের খবর জানার পরেও দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. নারী শ্রমিক নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এবং আত্মহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সৌদি নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগী হয়ে আর্ন্তজাতিক সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে সৌদি সরকারকে চাপ দেওয়া এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।

৩. সৌদি মালিকদের দ্বারা ধর্ষিত, নির্যাতিত, নিহত ও আত্মহত্যার শিকার নারীদের পরিবারকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ন্যূনতম দুই কোটি টাকা এবং নির্যাতিত হয়ে নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া নারীদের জনপ্রতি ন্যূনতম এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪. সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে নির্যাতিত নারীর মামলা প্রক্রিয়া সহজ ও মানবিক করতে সেদেশের সরকারকে চাপ দেওয়া। এছাড়া মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে সৌদিতে থাকার বাধ্যবাধকতার শর্ত বাতিল করতে হবে।

৫. নির্যাতনের মুখে দেশে ফেরার সময় ‘নিয়োগকর্তা তার সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ বা শর্ত ভঙ্গ করেনি’ বলে লিখিত জবানবন্দি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে সৌদি সরকারকে চাপ দিতে হবে।

৬. নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীদের পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. সৌদিতে নারী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অর্থ লেনদেনের শর্ত না থাকলেও যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের কাছ টাকা আত্মসাৎ করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৮. অতিরিক্ত মুনাফার জন্য মধ্যস্বত্বভোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যারা নারী শ্রমিকদের বিদেশি মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয় তাদের শাস্তির আওতায় আনা।

৯. রিক্রুটিং এজেন্সির দায়-দায়িত্ব নারী শ্রমিকদের জন্য তিন মাসের পরিবর্তে পুরুষ শ্রমিকদের মতো ন্যূনতম দুই বছর করতে হবে।

১০. কোনও সমঝোতা চুক্তির ওপর ভিত্তি করে নয়, আর্ন্তজাতিক শ্রম আইনে যথাযথ চুক্তির মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে হবে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন– আইনজীবী হাসনাত কাইউম, কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার, সংগঠক চারু হক, ফরিদুল হক, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।

 

/এসআইআর/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী