বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহৃত হচ্ছে হচ্ছে না। ৮২টি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ওপর গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওই গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় গবেষণাটি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের মোট ৮২টি রোগের জীবাণু রেজিস্ট্যান্ট বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টান্সে পরিণত হয়েছে। দেশের ১৫০টি ফার্মাসিটিউক্যালসের ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সির শীর্ষে রয়েছে—সিপ্রোফ্লক্সাসিন (২১ শতাংশ), অ্যামক্সিসিলিন (১৬.৫ শতাংশ), অ্যাজিথ্রোমাইসিন (১৪ শতাংশ), সেফালোস্ফোরিন (১৩.৩ শতাংশ), মেট্রোনিডাজল (১২.৮ শতাংশ), ফিনক্সি মিথাইল পেনিসিলিন (৯.৩ শতাংশ), ক্লোক্সাসিলিন/ফ্লুক্লক্সাসিন (৬.৫ শতাংশ), অ্যাজল অ্যান্টিফাঙ্গাল (৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য (৫.৩ শতাংশ)।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, এই মুহূর্তে যে কয়টি স্বাস্থ্যঝুঁকি মানবজাতির অস্তিতের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তথা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ না করা অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের কার্যকারিতা হারানোর ঘটনাকে নীরব মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এ ব্যাপারে পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৮২টি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, এই অ্যান্টিবায়োটিক বাংলাদেশে যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা সঠিক না।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার বিষয়টি ‘নীরব মহামারি’ আকার ধারণ করেছে। একে নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।”
সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ওষুধের ব্যবহার ও ব্যাকটেরিয়ার রেজিস্ট্যান্সের ধরণ—এ দুটি মিলিয়ে একটি জাতিকে তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বের করতে হবে, কর্মকৌশল উদ্ভাবন করতে হবে।’
বিএসএমএমইউ’র এই চিকিৎসক বলেন, ‘সাধারণ সংক্রমণজনিত রোগব্যাধির চিকিৎসা থেকে শুরু করে যেকোনও ধরনের অপারেশন, এমনকি ক্যান্সার চিকিংসাও অনেকখানি সহজ ও সফল হয়ে উঠেছিল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের আবিষ্কারের ফলে। কিন্তু রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভবের ফলে এসব রোগের চিকিৎসা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে উঠছে৷’
সেমিনারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।