দেশের ইতিহাসে প্রথম গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে আশ্রয়হীন মানুষকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালে তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর) জেলার রামগতির চর পোড়াগাছায় গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে অসংখ্য মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু চর পোড়াগাছায় দুর্গত মানুষের পাশে যান বঙ্গবন্ধু। সেখানে গিয়ে তাদের দুর্দশা দেখে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন ও অসহায় পরিবারগুলোকে খাসজমিতে পুনর্বাসনের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে চর পোড়াগাছায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। মুজিবশতবর্ষে এর কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও গুচ্ছগ্রামকেন্দ্রিক অনেকগুলো উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা প্রশাসন চর পোড়াগাছায় চারটি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে এক হাজার ৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এই প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪১ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে জলবায়ু দুর্গত ভূমিহীন, গৃহহীন ও নদী ভাঙা ৫০ হাজার দরিদ্র পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করা। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মোট এক লাখ সাত হাজার ১৮০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারি সফরের ওপর তথ্যচিত্র এবং কিছু তথ্য পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসক লক্ষ্মীপুর এবং গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। সেই অনুযায়ী লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসন রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছায় বঙ্গবন্ধুর সরকারি সফরের ওপর তথ্যচিত্র এবং চর পোড়াগাছায় ৫৯০ একর খাস জমির তথ্য পাঠায় মন্ত্রণালয়ে। একইসঙ্গে চর পোড়াগাছায় জাতির জনকের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য তিনটি স্থানের ভিডিও চিত্রও পাঠায় লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন।
বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে আরও এক হাজার ৫০০ পরিবারকে গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সরকারি খাস জমিতে কাবিখা কর্মসূচির আওতায় বসতভিটা উঁচু করা, ঘর, ল্যাট্রিন ও রান্নাঘর নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, কবুলিয়ত দলিল হস্তান্তর, বৃক্ষরোপণ, পুনর্বাসিতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম, উন্নত চুলা দেওয়া ও বিদ্যুতায়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়া জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ১০০টি গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম- পরিচ্ছন্ন শহর’ কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় আদর্শগ্রাম ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত গ্রামগুলোতে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আব্বাছ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মন্ত্রণালয় অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে ধরে রাখতে লক্ষ্মীপুরের চর পোড়াগাছায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হবে। তবে সেটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও গুচ্ছগ্রামকেন্দ্রিক কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।