কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশ অংশের তদন্ত শেষ হলেও শিগগিরই চার্জশিট দিতে পারছে না সিআইডি। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ফিলিপাইন, চীন, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের তথ্য দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। একারণে ওইসব দেশের অপরাধীদের বিষয়ে তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি নেই। ফলে এ মামলার চার্জশিট কবে দেওয়া হবে, সে বিষয়টিও অনিশ্চিত। তবে ওইসব দেশ তথ্য দিলে তিন মাসের মধ্যেই চার্জশিট দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে সিআইডি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে রির্জাভ চুরির মামলা ভালোভাবে তদন্ত শেষ করতে ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়া সরকারের কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনও ধরনের সাড়া মিলছে না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তথ্য দিলে তিন মাসের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া সম্ভব বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা মামলায় তদন্ত সংস্থা সিআইডি ৪১তম তারিখেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য আছে।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, রির্জাভ চুরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল সেটাও নিশ্চিত হওয়া গেছে। চার্জশিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার নাম থাকবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ফিলিপাইনসহ চার থেকে পাঁচটি দেশের কাছে তথ্য চেয়েছি। তারা না বলেনি। কিন্তু তথ্যও দিচ্ছে না। তাই আমরা তাদের তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে ওইসব দেশ যদি তথ্য নাও দেয়, তারপরও আমরা চার্জশিট দেবো। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অনেকের নাম থাকবে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আলোচিত এই মামলার সঙ্গে দেশি-বিদেশি অনেক নাগরিক জড়িত। তাই মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ৪/৫টি দেশের তথ্য প্রয়োজন। এসব দেশের তথ্য ছাড়া চার্জশিট দিলে সেটা পূর্ণাঙ্গ হবে না। এজন্য বাংলাদেশ অংশের তদন্ত শেষ করেও আমরা চার্জশিট দিতে পারছি না।’
মোস্তফা কামাল জানান, গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার তদন্তে দেরি হয়। তবে সেটা তো আর বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে না। যদি ওইসব দেশ তথ্য দিতে রাজি না হয়, তাহলে আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিট দেবো।
অন্য দেশগুলোর জড়িত নাগরিকদের তথ্য আনার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার ও অপরাধীদের শনাক্ত করতে ফিলিপাইনের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িতদের বৃত্তান্ত ও আর্থিক বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফিলিপাইন তাদের বিচার বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশকে তথ্য দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এর আগে ঢাকায় ফিলিপাইনের সঙ্গে সচিব পর্যায়ে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির বিষয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এ সংক্রান্ত কিছু মামলা চলছে। সিআইডি কয়েকটি বিষয়ে তাদের (ফিলিপাইন) সাহায্য চেয়েছে। যেমন, চুরির সঙ্গে জড়িত কয়েক জনের পরিচয়। এই তথ্য তারা এখনও দেয়নি। অবশ্য কিছু আর্থিক তথ্যের বিষয়ে তারা আশ্বাস দিয়েছে।
অপরাধীদের পরিচয় ও আর্থিক তথ্যগুলোর নিষ্পত্তি হলে মামলার চার্জশিট দিতে সুবিধা হবে। ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে তথ্য জমা আছে। তাদের অনুমতি সাপেক্ষে দেশটির সরকার এটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে, জানালেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আনা হয়েছে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাত বদল হয়। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির সঙ্গে দেশের ভেতরে কোনও একটি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।
সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ চুরির এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।