করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এই পরিস্থিতে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনে কাজ না করলে তাদের রাতের খাবার জোটে না। এই অবস্থায় হতদরিদ্র এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। রাজধানীতে ঘুরে ঘুরে তারা এসব মানুষকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ আর রাতের খাবার বিতরণ করছেন।
জানা গেছে, তারা দিনে ১০০ প্যাকেট চাল, পেঁয়াজ, আলু আর রাতে ২০০ প্যাকেট খাবার বিতরণ করেছেন শহরে ছড়িয়ে থাকা হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে। এদের বেশিরভাগই রিকশাচালক, বাস্তুহারা ও ভিক্ষুক। অনেকেরই থাকার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। পথেই ঠাঁই।
এই মানবিক কাজের উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিস অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ববাসী আতঙ্কিত। বাংলাদেশও লকডাউনের পথে। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। শহরের দরিদ্র মানুষগুলো কাজ করতে পারছেন না। এই অবস্থায় তারা তো না খেয়ে থাকবে। যারা ভিক্ষা করতেন, রাস্তায় মানুষ বের না হওয়ায় তারও ভিক্ষা করতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার মনে হয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব। এই উপলব্ধি থেকেই গত সোমবার থেকে আমরা কাজ শুরু করি।’
সৈকত বলেন, ‘প্রথমে নিজের অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করি। পরে টিএসসির স্টাফ, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকসহ অনেককেই ফোন দিয়ে ডোনেশন নিই। প্রথম দিন ৫০টি পরিবারের মধ্যে চাল, পেঁয়াজ ও আলু বিতরণ করি। পরের দিন থেকে শিক্ষক ও বড় ভাইরা সহযোগিতা শুরু করেন। তখন ১০০টি পরিবারের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা শুরু করি। যারা রাতে রাস্তা-ঘটে থাকেন, তারা তো আগের মতো খাবারও পাচ্ছে না। এ রকম ২০০ জনকে রাতের বেলা খিচুড়ি আর ডিম রান্না করে প্যাকেটের মাধ্যমে দিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রান্না করি। ক্যাম্পাসের চটপটি ও চায়ের দোকানদারেরা রান্নায় সহযোগিতা করেন। তাদের সামান্য কিছু পারিশ্রমিক দিই। এরপর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাতে ঘুরে ঘুরে খাবার বিতরণ করি। আর দিনের বেলায় দুই কেজি চাল, ডাল ও পেঁয়াজের প্যাকেট দিচ্ছি।’
ডাকসুর কার্যনির্বাহী এই সদস্য জানান, যতদিন কাছের লোকজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবেন, ততদিন এই সেবা চালু রাখবেন। আজ শনিবার (২৮ মার্চ) থেকে প্রতিদিন পাঁচশ’ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার টার্গেট রয়েছে তাদের।
ডাকসু থেকে কোনও সহযোগিতা পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই বাড়ি চলে গেছে। আর ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। তবে এখনও কোনও সহযোগিতা পাইনি।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছুটি ঘোষণা করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হতদরিদ্রদের সহযোগিতার উদ্যোগ এই মুহূতে নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
এই কাজে আরও যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাহিদুল ইসলাম, ইংরেজি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফরোজা আকতার এবং বাংলা অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমীন পাভেল।