X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘চিকিৎসকদের সুরক্ষা না দিলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না’

জাকিয়া আহমেদ
১৬ এপ্রিল ২০২০, ০৭:০০আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২০, ১২:১১

করোনা পরীক্ষা দেশে কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনিই প্রথম চিকিৎসক, যিনি মারা গেলেন। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়া চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাযুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা চিকিৎসকরা, তাদের বলা হয় ‘সুপার স্প্রেডার’। তাদের সুরক্ষা যদি ঠিকভাবে না দেওয়া যায় তাহলে আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে দেশের মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। তাই চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও আগে থেকে সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার ছিল। এখনও যদি সেটা না করা যায়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে মানুষ চিকিৎসাই পাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আক্রান্তদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যকর্মী, তাদের জীবন রক্ষা করতে না পারলে অনেক লোকের প্রাণ যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর তথ্য গোপন, চিকিৎসকদের জন্য সঠিক সুরক্ষা পোশাক না থাকা এবং পরীক্ষার সুযোগ কম থাকাতে চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই চিকিৎসকদের দরকার পর্যাপ্ত প্রটেকশন ব্যবস্থা এবং সেটা ছাড়া রোগীকে দেখতে যাওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

করোনা পজিটিভ হলেও তথ্য গোপন করে গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হন এক রোগী। তবে পরে সেটি স্বীকার করে তার স্বজনেরা। যদিও ততক্ষণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। আর রোগীর পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করার পর তাকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও এই বিশেষায়িত হাসপাতালের ৮ জন চিকিৎসকসহ মোট ১৬ জন কোয়ারেন্টিনে আছেন। দুই দিনের মধ্যে তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। এ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এম এ রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোগীর লোক তথ্য গোপন করায় আমাদের এত মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হলো, এখন তো হাসপাতালে চালানোই মুশকিল হয়ে যাবে।

একইসঙ্গে সারা দেশে এখনও চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যদের পিপিই সরবরাহ করা হয়নি, দেওয়া হয়নি সঠিক মাস্ক। ইতোমধ্যে ঢাকার ভেতরে একটি হাসপাতালে এবং ঢাকার বাইরে এন-৯৫ বলে যে মাস্ক দেওয়া হয়েছিল সেগুলো যথার্থ ছিল না বলে জানিয়েছে সেসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশে ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)-এর তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৬৫ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও মুখপাত্র ডা. নিরূপম দাশ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোনও সমন্বয় নেই, সমন্বয় ছাড়া কাজ হচ্ছে বলেই আজ এ অবস্থা। তাই এ দুর্যোগের সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় জড়িত তাদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। কোনও হাসপাতালের ট্রায়াজ নাই, কোনও ক্লিনিক্ল্যাল কোর কমিটি নাই, ক্লিনিক্যাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি নাই-এসবের জন্যই চিকিৎসকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন—বলেন ডা. নিরূপম দাশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সাংঘাতিকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রোগী তথ্য গোপন করছে, কেউ পিপিই সাপ্লাই দিচ্ছে না, যেগুলো দেওয়া হচ্ছে তার মান ঠিক নেই—সব মিলিয়ে চিকিৎসকরা ভীষণ অনিরাপদ অবস্থায় আছেন। এসব ঠিক না হলে তারা কেমন করে চিকিৎসা দেবেন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষ যতজনকে সংক্রমিত করেন, একজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ জনকে সংক্রমিত করার ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ, তাকে একের পর এক রোগী দেখতে হয়। তাকে হাসপাতালে যেতে হয়, তাই তার নিরাপত্তা দেখতে হবে সবার আগে, তাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে সবার আগে। তাদের সুরক্ষা না দিলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সার্জিক্যাল মাস্কের নামে চিকিৎসকদের যা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো কাপড়ের মাস্ক, এন-৯৫ বলে যেগুলো দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও ভুয়া, যেগুলো চিকিৎসকদের দেওয়া হচ্ছে তাতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য কিছুই নেই।

তিনি বলেন, ঢাকার প্রধান হাসপাতালগুলোতে যেসব পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া হয়েছে সেগুলোরই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ঢাকার বাইরে যেসব হাসপাতাল রয়েছে, বিশেষ করে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে থাকা হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবস্থা আরও খারাপ।

এদিকে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, কোভিডযুদ্ধে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের ছিল, সেটা দিতে ব্যর্থ হওয়ার পরও সেই চিকিৎসকরা তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে যদি একের পর এক চিকিৎসক আক্রান্ত হতে থাকেন তাহলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া লোকের সংখ্যা কমতে থাকবে। সেটা যেন না হয় সেদিকে নজর দেওয়া এই মুহূর্তে ভীষণ জরুরি।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী