X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে করোনার আখড়া

উদিসা ইসলাম ও জাকিয়া আহমেদ
১১ জুলাই ২০২০, ১৬:৩৭আপডেট : ১২ জুলাই ২০২০, ০৮:২৩

হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে করোনার আখড়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট সিসিইউ-এর সামনের করিডোর। ভেতরে রোগের সঙ্গে লড়াই করছে রোগী। বাইরে স্বজনদের লম্বা সারি। কেউ কাউকে চেনেন না। এখানে অপেক্ষা করতে করতে চেনাজানা। বেশিরভাগেরই মুখে মাস্ক নেই, কারও কারও মাস্ক থুতনিতে ঝুলানো।
শিশু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতাল পাশাপাশি। সামনে বসার সুন্দর ব্যবস্থা। গাছপালাও রয়েছে। রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন বসে-শুয়ে আছেন। কারও মধ্যে করোনা সচেতনতা নেই। নামে মাত্র মাস্ক  ঝুলিয়ে রেখেছেন। কেন মাস্ক পরেননি জানতে চাইলে এক ব্যক্তি জানান, ভাইয়ের অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে অনেকক্ষণ এই টেস্ট সেই টেস্ট করে দৌড়াদৌড়ি করে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। করোনার কথা মনে ছিল না। হাসপাতালে এভাবে ঘুরার সময় কেউ নিষেধ করেছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কে কাকে দেখে। কেবল একটা ঘরে ঢোকার সময় আরেক রোগীর সঙ্গে থাকা কেউ একজন মাস্ক পরতে বলেছিলেন। হাসপাতালের কেউ কিছু বলেননি।’

হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে করোনার আখড়া

কেবল এই তিনটি হাসপাতাল নয়, আশেপাশের আরও তিনটি হাসপাতালে গিয়ে একই চিত্র চোখে পড়ে। এমনকি রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় সাহায্যকারীদের মাস্ক পরতে দেখা যায়নি, সামাজিক দূরত্ব বা হাতে গ্লাভস তো দূরের কথা।

খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের যতটা সাবধান থাকা উচিত তা দেখা যাচ্ছে না। হাসপাতাল থেকেও নেই কোনও সতর্কতামূলক উদ্যোগ। তারা বলছেন, হাসপাতালে যেহেতু অনেক মানুষ আসে, আর করোনা আক্রান্ত অনেকেই লক্ষণ উপসর্গ বিহীন, তাই হাসপাতালগুলোতে সবার জন্যই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা দরকার।

হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে করোনার আখড়া

অসুস্থ শিশুকে নিয়ে সপরিবারে হাসপাতালে এসেছেন মানিক মিয়া। বড় ছেলে আর বউকে ভেতরে পাঠিয়ে এক ছেলে এক ভাই নিয়ে বাইরে মাদুর বিছিয়ে অপেক্ষা করছেন। ওই মাদুরেই আরেক পরিবার ভাগ বসিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। করোনার সময় কেন একটু দূরে দূরে বসছেন না জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান, কেন দূরে বসবেন। খুঁজে এই জায়গায় একটু ছায়া পেয়েছেন। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এরকম পরিস্থিতি সামাল দিতেও কোনও প্রচার প্রচারণা চোখে পড়েনি প্রতিবেদকের।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে নন কোভিড রোগী বা রোগীর স্বজনদের জন্য আলাদা করে সচেতনতামূলক কিছু করা হচ্ছে না। রোগীদের মাস্ক পরার জন্য বলা হলেও স্বজনদের জন্য কিছু নেই। তবে এটা করা উচিত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে যেহেতু অনেক মানুষ আসে, আর করোনা আক্রান্ত অনেকেই লক্ষণ উপসর্গবিহীন, তাই সবার জন্যই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা দরকার হাসপাতালগুলোতে।

হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে করোনার আখড়া

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা. আয়েশা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সচেতনতামূলক বার্তা সবসময় গণমাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে যারা কর্তৃপক্ষ আছেন তাদের দায়িত্ব সে হাসপাতালে কী হচ্ছে তা দেখা। তারা তো সেখানে অ্যাসাইন করা। রোগীসহ অন্যসব কিছুর দেখভাল করার দায়িত্বও তাদের।

তিনি আরও বলেন, কোনও হাসপাতাল থেকে যদি অভিযোগ আসে তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগ বাকিটুকু দেখবে। হাসপাতাল বিভাগের মনিটরিং টিম রয়েছে, তারাও ভিজিট করছে, তারাও দেখছে কোথায় কোথায় অব্যবস্থাপনা রয়েছে।

যেসব স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে সেগুলো মানা না হলে ঝুঁকি বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার মধ্যে মাস্ক অন্যতম। এটা তো শুরু থেকেই বলে আসছি। তারপরও আমরা আরও সচেতন হবো, এ ধরনের  অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পেলে আমরা সেটা খতিয়ে দেখবো।

তবে ঢাকা মেডিক্যালে মনিটরিং করা হয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরুদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার রুম থেকে একটা সাউন্ড সিস্টেম আমি চালাই। যেটা পুরনো ভবন, নতুন ভবন এবং বার্ন ইউনিট কাভার করে। সেখানে কিছু সময় পরপর নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাস্ক ছাড়া কাউকে এলাউ করি না আমরা। একইসঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে যে মাস্ক ছাড়া কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এটা দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে, সাবধানতা নেওয়ার ব্যাপারে আমি কঠিন নির্দেশনা দিয়েছি এবং সেগুলো মনিটর করা হচ্ছে।

হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে করোনার আখড়া

 ছবি; সাজ্জাদ হোসেন

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট